রায়গঞ্জ: ভিড় ট্রেনের মধ্যে অপরিচিতদের পাশ দিয়ে হেঁটে যান বহু মানুষ। তাঁরা রাস্তার খাবারে কামড় বসান, শহরের ধুলাবালি, ধোঁয়া ও অদৃশ্য জীবাণুদের শ্বাসের সঙ্গে ভেতরে টেনে নেন। তবুও, বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন না। এটা কিন্তু নিছক ভাগ্যের কারণে নয়, এটা একটানা চলা এক যুদ্ধের ফল। শরীরের ভেতরে সর্বদা বেঁচে থাকার এক অদৃশ্য লড়াই চলতে থাকে, যেখানে কোষগুলো শুধু বসে থেকে আঘাত সহ্য করে না। তারা খুঁজে বের করে প্রত্যাঘাতের পথ। তারা নিরস্ত করে শরীরের শত্রুকে। তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের প্রাক্তনী তথা বোম্বে আইআইটির অধ্যাপক অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি দল এই রকমই এক অতিক্ষুদ্র যুদ্ধকৌশলের পর্দা উন্মোচন করেছেন। যা প্রকাশিত হয়েছে নেচার মাইক্রোবায়োলজি পত্রিকায়। উল্লেখ্য, অনির্বাণ বাবু রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে, কীভাবে একটি হোস্ট প্রোটিন ভিসিপি/ পি ৯৭ একেবারে গোপন মিশনের মতো নির্ভুলভাবে কাজ করে। এদিন অনির্বাণ বাবু বলেন, ‘যখন একটি ব্যাকটেরিয়া কোষের ভিতরে ঢুকে পুষ্টি শোষণ করার চেষ্টা করে, তখন কোষটা আতঙ্কিত হয় না। বরং এটি ব্যাকটেরিয়াটিকে ‘ইউবিকুইটিন’ নামে একটি সতর্ক সংকেতযুক্ত অণু দিয়ে চিহ্নিত করে। এটাই সংকেত। তখনই ছুটে আসে ভিসিপি।’ আর এটা কী করে? গবেষকদের কথায়, এটি ব্যাকটেরিয়ার ঝিল্লি থেকে চুলের মতো সূক্ষ্ম প্রোটিনগুলোকে ধরে টেনে ফেলে। অনুপ্রবেশকারীকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কোষ-নির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়াকে ইউবিকুইটিনেশন এবং প্রোটিওসোমাল পদ্ধতির মাধ্যমে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু ইউবিকুইটিনযুক্ত ব্যাকটেরিয়াকে প্রোটিওসোম কীভাবে ধ্বংস করে, তা এতদিন অজানাই ছিল। এই জটিল আণবিক যুদ্ধটি উন্মোচন করেছেন পিএইচডি ছাত্র সৌরভ ঘোষ, যিনি সহায়তা পেয়েছেন অধ্যাপক সন্দীপ কালধানকর, অধ্যাপক রূপ মালিক, ড. জগন্নাথ মণ্ডল, অধ্যাপক দীপশিখা চক্রবর্ত্তীর কাছ থেকে। তাঁরা একসঙ্গে একটি কোষীয় আচার-বিধিকে ব্যাখ্যা করেছেন, যা ভবিষ্যতে আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।