বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: হোক না অভাবের সংসার, জেদ ও ইচ্ছাশক্তি যেন উড়ান দিল।
বেঙ্গালুরু উড়ে গেল প্রীতিকা বর্মন। রায়গঞ্জের (Raiganj) এই নবম শ্রেণির ছাত্রীটি অনূর্ধ্ব ১৭ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে ট্রায়ালে সুযোগ পেয়েছে। রায়গঞ্জের হাতিয়া হাইস্কুলের ছাত্রীটির এই উড়ান কিন্তু সহজ ছিল না। প্রীতিকার বাবা কাশীরাম বর্মনের রোজগারের নিশ্চয়তা নেই। মাঝেমধ্যে অন্যের টোটো চালিয়ে কোনওমতে সংসার চালান। বাড়িতে প্রীতিকা ছাড়া আরও দুই মেয়ে, স্ত্রী ও দুই ছেলে আছে।
ছোটবেলা থেকে চরম অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে প্রীতিকাকে। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা ছিল অদম্য। খেলার প্রতি গভীর নিষ্ঠা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন তাকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। জাতীয় মহিলা ফুটবলের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়ায় আরও আত্মবিশ্বাসী সে।
প্রীতিকার কথায়, ‘ছোটবেলায় বুঝে গিয়েছিলাম, অভাবের কথা কাউকে বলে কিছু হবে না। খেলতে যে পরিমাণ শারীরিক কসরত করতে হয়, সেই তুলনায় পুষ্টিকর খাবার কোনওদিন জোটেনি। কিন্তু সেসব কথা কোনওদিন ভাবিনি। মন দিয়ে পরিশ্রম করে গিয়েছি।’ সেই নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফল মিলেছে।
কিশোরীটির মা পুতুল বর্মন বলেন, ‘প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি ওর ঝোঁক। এত বছরের পরিশ্রমের ফলে মেয়ে এবার জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছে।’ মেয়ে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে বলে তিনিও আত্মবিশ্বাসী। বেঙ্গালুরু রওনা হওয়ার আগে শনিবার রায়গঞ্জ থানার গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের নুরপুর হাইস্কুলের মাঠে অনুশীলন করেছিল প্রীতিকা।
তখনই সে জানায়, এবারই আসল পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় সফল হতেই হবে বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সে। হাতিয়া হাইস্কুলের সব শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরিজিৎ ঘোষ মিলে প্রায় ৪০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন প্রীতিকার হাতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ সিনহা বলেন, ‘আমাদের স্কুলের অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছাত্রী প্রীতিকার জাতীয় ফুটবল দলে ট্রায়ালের সুযোগ পাওয়া আমাদের জন্য খুব গর্বের বিষয়।’
রবিবার সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বেঙ্গালুরুতে রওনা হয় প্রীতিকা। সোমবার থেকে শুরু হবে প্রশিক্ষণ। তার বোন লতিকাও ফুটবল খেলায় যথেষ্ট আগ্রহী। দিদি জাতীয় দলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়ায় লতিকার উত্সাহ আরও বেড়ে গিয়েছে।