বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: বিয়ের ভোজে মাংস শর্ট। তা নিয়েই বৌভাতের আসরে ঘটে গেল ধুন্ধুমার কাণ্ড। নিমন্ত্রিত পাঁচ তরুণ পাতে পর্যাপ্ত মাংস না পেয়ে প্রতিবাদে সরব হতেই পাত্রের পরিবার তথা আপ্যায়নকারীদের সঙ্গে বচসা বেধে যায়। মুহূর্তে বচসা থেকে হাতাহাতি, সংঘর্ষ এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালানোরও চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের দুজন গুরুতর জখমও হন। অবশেষে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার বড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গলুইসুরা গ্রামে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিন অভিযুক্ত আমন্ত্রিতকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ সহ একটি ওয়ান শটার আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। ঘটনার পর উভয়পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
রবিবার ধৃত তিনজন টিহাকু বর্মন, কালুয়া বর্মন ও বিপ্লব মণ্ডলকে রায়গঞ্জ মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে বিচারক দুজনকে ১৪ দিনের জেল হেপাজত ও বিপ্লব মণ্ডল ওরফে সটলকে দুইদিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে গলুইসুরা গ্রামের বাবলু বর্মনের ভাইপো বঙ্কো বর্মনের বৌভাত ছিল। প্রথমদিকে নিমন্ত্রিতরা নির্বিঘ্নে খাওয়াদাওয়া করলেও শেষ সময়ে মাংস ও মাংসের ঝোল ফুরিয়ে যায়। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। অভিযোগ, স্থানীয় পাঁচ তরুণ মাংস কম নিয়ে গোলমাল বাধায়। বচসা ও হাতাহাতি চলার সময় বিপ্লব মণ্ডল নামে এক তরুণ কোমর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি চালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে পাত্রের এক আত্মীয় অর্গেন বর্মন ও নিমন্ত্রিত বিপ্লব মণ্ডল জখম হন।
রবিবার সকালে অর্গেন বর্মন রায়গঞ্জ থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বৌভাতের আসর থেকে আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে, ধৃতদের পরিবারের তরফে অধিকা বর্মন নামে এক মহিলা পাত্রপক্ষের চার সদস্যের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ঘটনাপ্রসঙ্গে পাত্রের কাকা বাবলু বর্মন বলেন, ‘বৌভাতের শেষ দিকে মাংস শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমরা অনুরোধ করে বলেছিলাম, আরেকটা খাসি কাটা হচ্ছে। একটু সময় চাই। কিন্তু ওরা মদ্যপ অবস্থায় খাবার টেবিলে ভাত ফেলে দিয়ে আমাদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি করার চেষ্টা করে।’
অন্যদিকে অভিযুক্ত নিমন্ত্রিতদের অন্যতম রবি বর্মনের স্ত্রী অধিকা বর্মন বলেন, ‘বৌভাতের আসরে মাংস ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। সামান্য বিষয় ছিল, মিটিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু আচমকা পুলিশ এসে আমাদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আমিও বৌভাতের আয়োজকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ ওদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’
রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ধৃতদের কাছ থেকে দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও একটি ওয়ান শটার বন্দুক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একজনকে পুলিশি হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’