চন্দ্রনারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জ: নিজের মাদকাসক্ত জীবনের ভয়ংকর পরিণতির গল্প শুনিয়ে তরুণ সমাজকে সচেতন করছেন রায়গঞ্জের বাসিন্দা বাপিন সাহা। তিনি ক্যানসার আক্রান্ত। তাতে কী? মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তেই নেশামুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কলেজপাড়ার বাপিন আজ আলোর পথযাত্রী।
হাতের কাজ ভালো জানার সুবাদে একটা সময় দাপিয়ে বিয়ে বাড়ির ডেকোরেশনের কাজ করতেন রায়গঞ্জ কলেজপাড়ার বাসিন্দা বাপিন সাহা। রঙিন আলো, সাজসজ্জার কাজ করেই কেটেছে তাঁর দিনরাত। সেই কাজ করতে করতেই গাঁটছড়া বাঁধেন ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে। সুখের সংসারে নতুন আলো হয়ে আসে এক ছোট্ট সন্তান। কিন্তু আনন্দের সেই দিনগুলো ম্লান হয়ে যায় যখন মজার ছলে নেওয়া নেশা আস্তে আস্তে গ্রাস করে তাঁর জীবন। নেশার কবলে পড়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। একসময় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বিচ্ছেদ ঘটার পর থেকে একলা জীবনের একমাত্র সঙ্গী নেশাকেই আরও আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেন বাপিন।
ওই ধ্বংসের পথে হাঁটতে হাঁটতেই একদিন হুঁশ ফেরে তাঁর। সিদ্ধান্ত নেন নেশার জীবন ছেড়ে নতুন করে বাঁচার। ২০১৮ সালে নিজেই ভর্তি হন নেশামুক্তি কেন্দ্রে। কঠোর কৃচ্ছসাধনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে মুক্ত করেন সেই কুঅভ্যাস থেকে। কিন্তু এমনই নিয়তি, যখন সুস্থভাবে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন বাপিন, ঠিক তখনই তাঁর জীবনে নেমে এল আরও এক বড় বিপদ। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ল, তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ, ক্যানসার।
অবশ্য এহেন কঠিন সত্যের মুখোমুখি হয়েও ভেঙে পড়েননি মানুষটি। বরং নিজের অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শুরু করেন এক নতুন লড়াই। সমাজকে নেশার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে বিভিন্ন নেশামুক্তি কেন্দ্রে যেতে থাকেন। নেশা ছাড়ানোর বার্তা ছড়িয়ে দিতে প্রতিদিন নিয়ম করে সকালেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন মানুষের সঙ্গে।
তাঁর কথায়, ‘এখন আমার চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল আর বাড়ি এখন নিত্য দিনের যাত্রাপথ। এই পরিস্থিতিতে আমার ইচ্ছা শুধু একটাই, যাঁরা নেশার এই দুনিয়াকে মজা ভাবছেন, তাঁদের কাছে পৌঁছে জীবনমুখী কথা বলব, পরিবারকে বাঁচানোর কথা বলব। নিজের পরিণতির কথা তুলে ধরে যদি একজনকেও সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারি, তাতেই নিজেকে ধন্য মনে করব। কারণ, আমি চাইনা আমার মতো ক্ষতি আর কারোর হোক।’
বাপিনের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সমাজকর্মীরা। সমাজকর্মী প্রসেনজিৎ সেন বলেন, ‘বাপিনের লড়াই আজ বহু তরুণের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। নেশার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার গল্প বলে তিনি সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছেন নতুন আশার আলো।’