Raghunathganj | গদাইপুরে দুর্গার পায়ে শিকল, মুখে কাপড়

Raghunathganj | গদাইপুরে দুর্গার পায়ে শিকল, মুখে কাপড়

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


পরাগ মজুমদার, বহরমপুর: প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন রঘুনাথগঞ্জের (Raghunathganj) গদাইপুরের ইতিহাসবিজড়িত ‘পেটকাটি’ দুর্গাকে ঘিরে আজও মানুষের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনার অন্ত নেই। প্রাচীন ধর্মীয় রীতি মেনে ‘পেটকাটি দুর্গা’র কাঠামোয় মাটির প্রলেপ দেওয়ার পরই এলাকার বাকি মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়। রঘুনাথগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের গ্রাম আহিরণ। ঠিক তার ডান পাশের ইটের রাস্তা ধরে গেলে পৌঁছানো যায় গদাইপুরে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে আখরি নদী। বরাবরই এই নদীর বুক থেকে মাটি তুলে শুরু হয় মূর্তি তৈরির কাজ। প্রায় ন’ফুট দীর্ঘ ও তেরো ফুট চওড়া এই সাবেকি মূর্তির মাপও প্রতি বছর থাকে একই।

কয়েকশো বছর আগে এই পেটকাটির পুজোর সূচনা হয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের হাত ধরে। এই পুজোর দেখভালের জন্য পরিবারের তরফে নিয়োগ করা হয় এক দরিদ্র ব্রাহ্মণকে। স্ত্রী এবং মেয়ে সহ সেই ব্রাহ্মণের থাকার ব্যবস্থা করে দেয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। কথিত আছে কোনও এক বছরে সন্ধিপুজোর সময় ব্রাহ্মণের কিশোরী মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেদিন ভোররাতে মা দুর্গা পুরোহিত ও তাঁর স্ত্রীকে স্বপ্নে দেখা দেন। মা বলেন, যে তিনি নিজেই দম্পতির ওই মেয়েকে মন্দিরের আঙিনায় দেখে মুগ্ধ হয়ে গিলে ফেলেছেন। এরপর দেবী নিজেই নির্দেশ দেন, সকালেই পুজোয় ছাগবলি দিয়ে তাঁর পেট কেটে মেয়েটিকে উদ্ধার করার। সেই নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন দেবীর পেট কেটেই জীবন্ত কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।

সেই থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজো পেটকাটি দুর্গাপুজো নামে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। এখনও প্রতিমার মুখে এক টুকরো কাপড় লাগানো থাকে। আর পায়ে পরানো থাকে শিকল। প্রাচীন রীতি মেনে প্রতিমা তৈরির সময় কেটে রাখা হয় পেট। মুখে আটকানো শাড়ির আঁচল ওই কিশোরীকে খেয়ে ফেলার প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়। ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে সেই থেকেই দেবীর পায়ে প্রতীকী শিকল পরানো থাকে। পুজোর চারদিন মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়। বোধন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো। ষষ্ঠীর দিন হয় বলিদান। সপ্তমী ও নবমীতে দেওয়া হয় আমিষ ভোগ। পুজোকে ঘিরে রয়েছে আরও ঐতিহাসিক কাহিনী। যেখানে পঞ্চমীর সকালে নিয়ম মেনে প্রতি বছর হাজির হয় পাঁচটি পায়রা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, তারা উমা পরিবারেরই জীবন্ত রূপ। পুজো শেষে দশমীর দিন লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যায় ওই পায়রারা।

স্থানীয় বাসিন্দা নিরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘দশমীর দিন এই আখরি নদীতে নৌকায় চাপিয়ে দেবীকে নিয়ে আসা হয় রঘুনাথগঞ্জের সদর ঘাটে। তার পরে নিয়ে আসা হয় ভাগীরথী নদীর তীরে। সেখানেই পুরো শহরের সমস্ত প্রতিমাও আনা হয় বিসর্জনের জন্য।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *