Pretend Certificates | থানাতেই জাল সার্টিফিকেটের কারবার, ধৃত সিভিক 

Pretend Certificates | থানাতেই জাল সার্টিফিকেটের কারবার, ধৃত সিভিক 

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


সুশান্ত ঘোষ, মালবাজার: এ যে সর্ষের মধ্যেই ভূত! পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটও জাল। খোদ থানায় বসেই সেই জাল সার্টিফিকেট (Pretend Certificates) তৈরি করে ডিআইবিতে কর্মরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার। মণিরুল ইসলাম নামে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে রবিবার মাঝরাতে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করে মাল পুলিশ। ধৃতের বাড়ি কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজামবাড়ি এলাকায়।

রবিবার সন্ধ্যায় মাল থানায় আর্মির পোর্টার পরীক্ষার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটে ঠিকানা পরিবর্তন করতে আসেন কিছু চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের হাতে থাকা সার্টিফিকেট দেখেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় পুলিশের। দেখা যায়, সার্টিফিকেটে ডিজিটাল সিগনেচার নেই। নেই বার কোডও। শুধু হাতে লেখা সিগনেচার আছে।

যেখানে এই সার্টিফিকেট তৈরির পুরো বিষয়টিই অনলাইনের মাধ্যমে হয়, সেখানে ডিজিটালের বদলে হাতে লেখা সিগনেচার ও স্ট্যাম্প থাকায় সন্দেহ হয় পুলিশের। সার্টিফিকেটগুলি জাল বুঝে সুয়োমোটো মামলা রুজু করে পুলিশ। তারপরই খোঁজখবর শুরু হয়। অনুসন্ধানের পর পুলিশ জানতে পারে, জাল সার্টিফিকেটের সঙ্গে তাদেরই সিভিক ভলান্টিয়ার, বছর ৩৪-এর মণিরুল জড়িত।

জেরায় মণিরুল বিষয়টি স্বীকার করে নেয়। তারপরই তাকে গ্রেপ্তার (Arrest) করা হয়। মণিরুলকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিজের বাড়িতে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের একটি ক্যাফে আছে। সেখানে বসেই জাল সার্টিফিকেটগুলি তৈরি করে মণিরুল। সেগুলো রাতে থানায় নিয়ে গিয়ে আইসির স্ট্যাম্প লাগাত সে। তারপর নিজেই জাল স্বাক্ষর করত। এভাবে মণিরুল মোট ২২ জন চাকরিপ্রার্থীর জন্য একই সার্টিফিকেট তৈরি করে দেয়।

মূলত অনলাইনে নির্দিষ্ট ফি জমা করে এই সার্টিফিকেট সরাসরি চাকরিপ্রার্থীরা সংগ্রহ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। তবে চটজলদি সার্টিফিকেটের জন্য বাগ্রাকোট এলাকার কিছু তরুণ মালবাজার থানার ডিআইবি অফিসে মণিরুলের সঙ্গে‌ যোগাযোগ করেন। মণিরুল মোটা টাকার বিনিময়ে সেই তরুণদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট বানিয়ে দেয়। এই ঘটনায় মালবাজার থানার পুলিশ ৩১৮(৪), ৩৩৬(৩), ৩৪০(২) ও ৩৪১(১) ধারায় মামলা রুজু করে। প্রতিটি জাল সার্টিফিকেটের বিনিময়ে মণিরুল ৪০০০ থেকে ৬০০০ টাকা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ।

রবিবার মাঝরাতে গ্রেপ্তারির পর অভিযুক্ত মণিরুলকে সোমবার আদালতে তোলে পুলিশ। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে হেপাজতে নিতে চেয়ে আবেদন করে। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে মণিরুলকে পুলিশ হেপাজতে পাঠিয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে মণিরুল ভেঙে পড়ে। তার সাফাই, ‘আমি করতে চাইনি। অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে গিয়েছে।’ সকাল থেকেই মণিরুলের পরিবারের লোকজন থানায় ভিড় করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জাল সার্টিফিকেট পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদেরও ডেকে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এবিষয়ে এসপি খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, ‘মামলাটি দ্রুত নজরে আসায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অভিযুক্তকে রিমান্ডে নিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।’

জাল সার্টিফিকেট কাণ্ডে এর আগে মাল পুরসভার নাম জড়িয়েছে। এবার জুড়ল মাল থানার নাম। বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন আইনজীবী মহল। এনিয়ে আইনজীবী সুমন শিকদারের বক্তব্য, ‘থানা হল প্রশাসনের চোখ ও কান। সেই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতে এ ধরনের ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রশাসনের দুর্বলতা। এ ধরনের সার্টিফিকেট যদি আগামীদিনে বাইরের দেশের কোনও মানুষের হাতে চলে যায়, তাহলে দেশের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে। প্রশাসনকে আরও কঠোরভাবে প্রতিটি দপ্তরে নজর রাখতে হবে।’ এবিষয়ে আরেক আইনজীবী তানভির আলম বলেন, ‘এই কেসটির বিষয়ে শুনেছি। আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি অনুভব করছি, এটা শুধুমাত্র একজনের কারসাজি নয়। একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের পক্ষে এত বড় কাজ একা করা সম্ভব নয়। আমার মতে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হওয়া উচিত। তাহলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *