নয়াদিল্লি ও ইম্ফল: হিংসার আগুনে জ্বলছিল মণিপুর (Manipur)। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত সংঘর্ষের জেরে মৃত্যু হয়েছে ২৬০ জনের। বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা অনেক বেশি। সেই হিংসা শুরুর পাক্কা ২ বছর ৪ মাসের ব্যবধান শেষে শনিবার অশান্ত মণিপুরে পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে কুকি ও মেইতেইরা খুব একটা উৎসাহী নয়। বরং মানুষ যে কেন্দ্রের আচরণে সন্তুষ্ট নয়, সেটা ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে চূড়াচাঁদপুরে মোদির কাটআউটে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। এর জেরে গোটা জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে মণিপুর প্রশাসন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কেইশাম মেঘাছন্দ্রা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে প্রতীকী বলে আখ্যা দিয়েছেন।
শুক্রবার মণিপুরের মুখ্যসচিব পুনীতকুমার গোয়েল জানিয়েছেন, শনিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ মিজোরামের আইজল থেকে চূড়াচাঁদপুরে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। রক্তক্ষয়ী কুকি-মেইতেই সংঘর্ষে যাঁরা ভিটেচ্যুত হয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি মণিপুরের জন্য ৭৩০০ কোটি টাকা মূল্যের একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাসও করবেন তিনি। পরে পিস গ্রাউন্ডে একটি জনসভা করবেন তিনি। তাঁর আশা, প্রধানমন্ত্রীর সফর মণিপুরে শান্তি, স্বাভাবিক অবস্থা এবং বিকাশের রাস্তা খুলে দেবে। চূড়াচাঁদপুরের পাশাপাশি ইম্ফলের কাংলাতেও যাবেন মোদি। ১৪ তারিখ সেখান থেকে অসমে যাওয়ার কথা তাঁর।
দীর্ঘদিন মণিপুর অশান্ত থাকলেও একটিবারের জন্যও মণিপুরে যাওয়ার কথা ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী। বরং সেই সময়কালে একাধিক বিদেশ সফর সেরেছেন। যা নিয়ে বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। যদিও মোদি তাতে কোনও গা করেননি। এতদিন বাদে তিনি মণিপুর যাচ্ছেন শুনে স্বাগত জানিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। শুক্রবার গুজরাটের জুনাগড়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘মণিপুরের বিষয়টি তো চলছে অনেকদিন ধরে। উনি যে এখন যাচ্ছেন সেটা তো ভালো কথা। তবে দেশের প্রধান ইস্যু হল ভোট চুরি। কর্ণাটকে আমরা ভোট চুরি ধরে ফেলেছি। কিন্তু মহারাষ্ট্র, হরিয়ানাতেও ভোট চুরি করা হয়েছিল।’ এর আগে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মেরেকেটে তিন ঘণ্টা থাকবেন মণিপুরে। তাঁর এই স্বল্প সময়ের সফর আদতে মণিপুরের লোকজনকে অপমান করা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
চূড়াচাঁদপুরকে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে তাঁর সফরের জন্য বেছে নিয়েছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হিংসায় সবথেকে ক্ষতি হয়েছিল এই জেলারই। কুকিরা এই জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। অপরদিকে, ইম্ফলে মেইতেইরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতেই তিনি চূড়াচাঁদপুর ও ইম্ফলকে বেছে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।