দুর্গাপুরঃ আসানসোল দুর্গাপুরের সিপি বা পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী সোমবার সন্ধ্যায় কাঁকসা থানায় বসে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, কোনও ইভটিজিং হয়নি। দুটি গাড়ি নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করছিল। আর তা থেকেই এই দুর্ঘটনা। তিনি আরও বলেছিলেন, তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু পানাগড়ের ঘটনার পর ৩৬ ঘন্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও, মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আর এখানেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মৃত যুবতী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের মা সহ অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দিতে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির একটি দল এই ঘটনার তদন্ত করতে কাঁকসা থানায় আসে। সেখানে তারা দুর্ঘটনাগ্রস্ত দুটি গাড়ির নমুনা সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে তারা এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসারদের নিয়ে পানাগড়ে যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছিল, সেই জায়গাও পরিদর্শন করেন।
অন্যদিকে, জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত সাদা এসইউভি গাড়ির মালিক পানাগড়ের কাবাড়ি পট্টির বাসিন্দা ব্যবসায়ী বাবলু যাদব। বুধবার সকালে বাবলুর খোঁজে তার বাড়ি ও গোডাউনে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু বাবুলর খোঁজ পায়নি। পুলিশ বাবলুর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে এসিপি ( কাঁকসা) বলেন, পলাতক বাবলু যাদব নিজেই সাদা গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
নিজের সহকর্মীদের সঙ্গে একটি গাড়িতে রবিবার রাতে একটি বিয়ে বাড়ির কাজে গয়া যাচ্ছিলেন হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের কর্ণধার পেশায় নৃত্য শিল্পী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। তার সঙ্গে ছিলেন মিন্টু মণ্ডল ও প্রদীপ দত্ত। তারা দু’জনেই হুগলি জেলার বাসিন্দা। এছাড়াও ছিলেন বর্ধমানের বাসিন্দা মন্টু ঘোষ। গাড়ি চালক ছিলেন হুগলির ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা রাজদেও শর্মা। রবিবার রাত বারোটার পরে পানাগড়ে একটি সাদা রঙের এসইউভিতে থাকা জনা পাঁচেক যুবক চন্দননগরের বাসিন্দা সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় (২৭) কে উত্যক্ত করছিল বলে অভিযোগ। সাদা গাড়িটি সুতন্দ্রাদের গাড়িটিকে বেশ কয়েক কিলোমিটার পিছু ধাওয়া করে। পরে পানাগড় রাইস মিল রোডে সুতন্দ্রাদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। তাতে সুতন্দ্রার মৃত্যু হয়। বাকিরা আহত হন। সোমবার সকালে দুর্ঘটনার খবর সামনে আসার পর থেকেই এই অভিযোগ তুলে আসছিলেন সুতন্দ্রার সঙ্গীরা, বিশেষত তার গাড়ির চালক। গোটা বিষয়টি নিয়ে সোমবারই কাঁকসা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মিন্টু মণ্ডল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
এদিকে, সোমবার জানা যায়, সাদা এসইউভি গাড়িটি ব্যবসায়ী বাবলু যাদবের। কিন্তু বাবলুকে সোমবারের পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সোমবার বাবলুর এক কর্মী জিয়া লালকে জেরা করে। সে জানায়, রবিবার সন্ধ্যা সাতটার পরে এই সাদা গাড়ি নিয়ে বাবলু বেরিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিল গোডাউনের চার কর্মী। তাদের নাম কি পুলিশ জেনেছে? তাদের নাম কেন সামনে আসছে না? তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কি ব্যর্থ? নাকি বাবলুদের বাঁচানোর কেউ চেষ্টা করছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।