কেকা ঘোষ মিত্র (লাটাগুড়ির বাসিন্দা)
সকাল থেকে সব ঠিকঠাকই চলছিল। পহলগামের যে এলাকায় আমরা আছি সেই জায়গাটার নাম রিভার র্যাফটিং পয়েন্ট। একটু পরেই আমার মেয়ে বৃষ্টি আর দলের কয়েকজনের বৈসরণে ঘাসের উপত্যকায় যাওয়ার কথা ছিল। ওখানে তো যাওয়ার একমাত্র বাহন ঘোড়া। টিমের বাকিদের যাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। গত কয়েকদিন এত ঘুরেছি যে ক্লান্তিতে আর ওরা তিনজনও আর যেতে চাইল না। তাই হয়তো ওরা বেঁচে গেল।
জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) থেকে গত ১৭ তারিখ পহলগাম এসে পৌঁছেছি। আমি লাটাগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা। আমাদের পরিবার বলতে আমার মেয়ে বৃষ্টি ও স্বামী বিশ্বজিৎ। আমাদের টিমে বাকি সঙ্গীরা জলপাইগুড়ি শহরের টেম্পল স্ট্রিটের বাসিন্দা অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী সীমা ও আরেক পরিবার জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়-শান্তা আর ওঁদের মেয়ে দেবস্মিতা। কাশ্মীরের অপূর্ব প্রকৃতি দেখতে দেখতে কখন যেন ভুলেই গিয়েছিলাম এখানকার জঙ্গি সন্ত্রাসের কথা। আজ সকালে যখন বৈসরণ ঘাস উপত্যকায় যাওয়ার কথা উঠল তখন বয়স্করা কেউই যেতে চাইল না। যাওয়ার ইচ্ছা ছিল বৃষ্টি আর দেবস্মিতার। আমাদের টিম ম্যানেজার শুভম দাস ওদের নিয়ে যেতেন। কিন্তু আমরা যাচ্ছি না বলে শেষপর্যন্ত ওরাও গেল না।
কিছুক্ষণ আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম আমরা। এই এলাকাটা বেশ জমজমাট। বেশকিছু দোকানপাট আছে। দুপুরে আমাদের হোটেলের কাছেই একটা রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করছিলাম। হঠাৎ শুভমের ফোন। জানাল, পহেলগাঁওয়ের (Pahalgam Terror Assault) বৈসরণে পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে জঙ্গিরা। অনেকে মারা গিয়েছে। আমরা যেন এখনই হোটেলে ফিরি। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে হোটেলের দিকে ছুটলাম সকলে।
তারপর থেকেই হোটেলে বন্দি। জানলা দিয়ে দেখলাম, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে গোটা এলাকাটার চেহারা কেমন বদলে গেল। আগে যেখানে কয়েকশো মানুষ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সেই জায়গাটা শুনসান। শুধু ভারী বুটের শব্দ তুলে টহল দিচ্ছেন উর্দি পরা জওয়ানরা।
হোটেলে ফেরার পর এখানকার কর্মীরা আমাদের বাইরে বেরোতে বারণ করেছেন। কোনওকিছু লাগলে ওঁরাই এনে দিচ্ছেন। যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছি ওঁদের থেকে। কেন যে এখানে জঙ্গি হামলা হয়, বুঝতে পারি না। আগামীকালই শ্রীনগর থেকে বিমানে ঘরে ফেরার কথা। কিন্তু কী করে ফিরব, আপাতত সেই চিন্তায় রয়েছি সকলে।