সিদ্ধার্থশংকর সরকার, পুরাতন মালদা: বিস্তৃত জলরাশির সঙ্গে মেঘে ঢাকা আকাশের এক মনোরম ছবি। বর্তমানে পুরাতন মালদা ব্লকের (Outdated Malda) ভাটরা বিলে গেলে দেখা যাবে এমন দৃশ্য। মানুষজনের মুখে মুখে যা মিনি দিঘা নামে পরিচিত। এটি পর্যটকদের কাছেও একটি অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের জায়গা।
বর্ষাকালে এই বিল এক অন্য রূপ ধারণ করে। তখন সেটির অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে লুকিয়ে থাকে এক চাপা হতাশা। কিন্তু কী এই হতাশা?
বিলের ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেক নৌকা। যা একটা সময় বিলের বুকে পর্যটকদের নিয়ে দাপিয়ে বেড়াত। কিন্তু বর্তমানে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা এড়ানোর কথা বলে বিলে নৌকা চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে বর্তমানে সেগুলি নীরব হয়ে রয়েছে। ফলে থেমে গিয়েছে ওই নৌকাগুলির মাঝিদের জীবিকা নির্বাহের রাস্তা। পাশাপাশি থেমে রয়েছে পর্যটকদের নৌকাবিহারের স্বপ্নও।
একটা সময় এই বিলের জলরাশি ছিল মাঝিদের রুটিরুজির উৎস। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষজন আসতেন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আর ওই পর্যটকদের নৌকা করে বিলে ঘুরিয়ে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ হত।
মাঝিদের কথায়, প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত তাঁদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। অনেকে ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা তৈরি করেছিলেন। আবার অনেক মাঝি পর্যটক টানতে তাঁদের ওই নৌকাগুলিকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে তুলেছেন। কিন্তু এখন ওই নৌকাগুলোই তাঁদের লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাটরা এলাকার বাসিন্দা তথা পেশায় মাঝি প্রভাত মৃধা বলেন, ‘আমরা সমস্ত নিরাপত্তা মানার পাশাপাশি নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করে নৌকা চালানোর জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম। এবিষয়ে লিখিত আবেদনও জমা দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে না।’
অপর এক মাঝি লক্ষ্মণ মৃধা বললেন, ‘বিলে নৌকা চালানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যটকরা এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আমাদেরও আর্থিক অবস্থা দিন-দিন খারাপ হচ্ছে। আমরা চাই প্রশাসন তাড়াতাড়ি এবিষয়ে পদক্ষেপ করুক।’
তবে বিলে নৌকা চালাতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা শুধু মাঝিদেরই সমস্যা ডেকে আনেনি। এলাকার পর্যটনশিল্পের জন্যও একটি বড় ধাক্কা। কারণ, ওই ভাটরা বিলকে কেন্দ্র করে পর্যটনের এক অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তা সত্ত্বেও একে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ভাটরা বিলের সৌন্দর্যকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যেত তাহলে তা মালদার পর্যটন মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে পারত।
এবিষয়ে পুরাতন মালদার বিডিও সেঁজুতি পাল মাইতির বক্তব্য, ‘বিলে নৌকা চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে মাঝিরা এব্যাপারে কোনও আবেদন করলে আমরা তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব।’
কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, নিরাপত্তার নামে এই সম্ভাবনা িক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। নাকি প্রশাসন ও মাঝিদের মধ্যস্থতায় কোনও সমাধানসূত্র বের হবে। এমন প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে সময়ের গর্ভে।