তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: বসন্তে রং বদলে যায় কার্সিয়াংয়ের (Kurseong)। শ্বেতশুভ্র রং ছড়িয়ে নিজের নাম মাহাত্ম্য তুলে ধরে পাহাড়টি। লেপচাদের কাছে অর্কিডের (Orchid) পরিচয় খুর্সন-রিপ নামে। সেখান থেকেই এখন পাহাড়টির পরিচয় কার্সিয়াং। এই অর্কিডের খ্যাতি দেশ-বিদেশে এতটাই যে, এসময় পর্যটকরা ভিড় জমান এখানে। সংখ্যাটা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাই বিশেষ নজর দিয়েছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। নেওয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনাও।
দার্জিলিং (Darjeeling) পাহাড়ের পরিবর্তে এখন সিকিমে কেন বেশি পর্যটক ভিড় জমান, এই প্রশ্নটা অনেকদিন ধরেই উঠছে। সিকিমে একের পর এক নতুন ডেস্টিনেশন তৈরি হওয়ায় যে সেখানে বেশি ভিড়, তা অস্বীকার করেন না পর্যটন ব্যবসায়ীরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে নতুন ডেস্টিনেশনের দাবি তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই তুলে ধরছেন। তাঁদের দাবিকে মান্যতা দিয়ে নতুন নতুন জায়গা তুলে ধরার প্রয়াস চালাচ্ছে জিটিএ। ওই লক্ষ্যেই গতবছর জিটিএ-র তরফে কার্সিয়াংয়ে হোয়াইট অর্কিড হেরিটেজ ওয়াক রুটের উদ্বোধন করা হয়। সাত কিলোমিটার এই রুটে সাদা অর্কিডের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবছর তাই এসময় অনেকেই ছুটে আসছেন। চিমনি থেকে ডোকানদারা পর্যন্ত চলতে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু সাদা অর্কিডের টানেই যেন ক্লান্তিহীনভাবে পথ চলেন সকলে। জিটিএ-র অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের মুখ্য কোঅর্ডিনেটর দাওয়া গ্যালপো শেরপা বলছেন, ‘অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমপ্রেমীর পাশাপাশি পরিবেশপ্রেমীরাও সাদা অর্কিডের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন। ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলাকাটি। কীভাবে এই রুটটিকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তোলা যায়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে কিছু পরিকল্পনা।’
প্রায় সাত কিলোমিটার হোয়াইট অর্কিড হেরিটেজ ওয়াক রুটটিতে ইতিমধ্যেই উঁকি দিয়েছে শ্বেতশুভ্র অর্কিড। হাইকিংয়ের রাস্তাটিকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নতুন করে অর্কিড গাছও লাগানো হয়েছে। সম্প্রতি কার্সিয়াংয়ের ডাউহিল পাইন ফরেস্ট পরিদর্শনে এসে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য সাদা অর্কিডের উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের সঙ্গে যুক্ত রাজ প্রাজুলির বক্তব্য, ‘পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগায় দিনের আলোতেই পর্যটকরা রুটটি শেষ করতে পারছেন। পাশাপাশি ঘন পাইন বন ও চিত্রের গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার সঙ্গেও পরিচিত হতে পারছেন। তাই পর্যটকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। জিটিএ মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘কার্সিয়াংয়ের সাদা অর্কিডকে কীভাবে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তোলা যায়, তা নিয়ে গত মাসে কার্সিয়াংয়ে একটি আলোচনা সভা হয়েছে। বেশ কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।’
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,১০০ ফুট উচ্চতা থেকে ৭,১৩৭ ফুট উচ্চতায় শেষ হওয়া রুটটির শোভা বাড়াচ্ছে উঁকি দেওয়া সাদা অর্কিড।