নয়াদিল্লি: দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার সরকারি বাসভবন থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। এত টাকা কোথা থেকে এল তার সদুত্তর মেলেনি। নগদ-কাণ্ডের জের কাটতে না কাটতে বিচারপতি ভার্মার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও একটি ঘটনার কথা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, এক জালিয়াতি মামলায় সিবিআই ও ইডি’র আতশকাচের নীচে ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের এই বিচারপতি। ২০১৮ সালের ওই মামলার তদন্ত নতুন করে শুরু করতে গত বছর সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। কিন্তু কিছুদিন বাদেই সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, বছর কয়েক আগে সিমভাউলি সুগার মিল নামে একটি চিনিকলের নন-এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন বিচারপতি ভার্মা। সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের জামাই গুরপাল সিং। ওই চিনিকলের বিরুদ্ধে ঋণ প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছিল ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অফ কমার্স (ওবিসি)। অভিযোগের তদন্তে নামে সিবিআই। ব্যাংকের বক্তব্য, তাদের হাপুর শাখা থেকে ২০১২-তে ৫,৭৬২ জন কৃষককে সার ও বীজ কিনতে মোট ১৪৯.৫৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ওই টাকা থার্ড পার্টি অ্যাকাউন্ট মারফত কৃষকদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে যাওয়ার কথা ছিল। কৃষকদের হয়ে ঋণের গ্যারান্টার ছিল সিমভাউলি সুগার মিল। অর্থাৎ, ঋণ পরিশোধের জন্য তারাই দায়বদ্ধ ছিল। কিন্তু পরে দেখা যায়, ব্যাংককে কৃষকদের ভুয়ো কেওয়াইসি জমা দিয়ে ঋণের টাকার সিংহভাগ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। যার জেরে ব্যাংকের দেওয়া ঋণের বড় অংশ অনাদায়ি রয়ে যায়।
২০১৫-র মার্চে ওবিসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে জালিয়াতির কারণে ৯৭.৮৫ কোটি টাকা তাদের পক্ষে আদায় করা সম্ভব হয়নি। মামলার তদন্তে নেমে সিবিআই ২০১৮-য় একটি এফআইআর দায়ের করেছিল। সেখানে গুরপাল সিং ছাড়াও বিচারপতি ভার্মার নাম ছিল। সিবিআইয়ের সমান্তরালে ইডিও মামলার তদন্ত শুরু করে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তদন্তে উঠে আসে একাধিক ঋণ খেলাপির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনও অজ্ঞাত কারণে একের পর এক ব্যাংক সিমভাউলি সুগার মিলকে কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যার মোট পরিমাণ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। অন্তত ৭টি ব্যাংক সিমভাউলি সুগার মিলকে ঋণ দিলেও সিবিআই, ইডি-র কাছে জালিয়াতির অভিযোগ জানিয়েছিল একমাত্র ওবিসি-ই। সেই মামলায় ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট সিমভাউলি এবং ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৭টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে সিবিআইকে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতের নির্দেশে, ব্যাংকগুলির ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি ও এর সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়। কিন্তু সিবিআইয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ের তদন্ত শুরু হওয়ার এক মাসের মধ্যে এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।
সম্প্রতি বিচারপতি ভার্মার বাসভবনে আগুন লাগার জের ধরে রাশি রাশি টাকা উদ্ধারের পর ২০১৮-র ঋণ জালিয়াতি মামলা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এদিকে বিচারপতি ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করার পর সেখানকার বার অ্যাসোসিয়েশন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিতর্কের ঝড় ওঠার পর সুপ্রিম কোর্টের তরফে একটি প্রেস নোটে জানানো হয়েছে, বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বাসভবনের ঘটনা নিয়ে ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার পর দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।