রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখছেন একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ (MR)। তিনি রোগীদের সমস্যা শুনছেন, ওষুধ লিখছেন, এমনকি রোগীর কোনও শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হলে সেটাও কোথা থেকে করতে হবে, তা বলে দিচ্ছেন। অবশ্যই তিনি সেখানে বসে বেসরকারি ক্ষেত্রে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার ছক কষছেন। আর এই কারবারে মদত দিচ্ছেন বিভাগের চিকিৎসকরা। অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (NBMCH) থেকে রোগীকে ফুসলিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল অথবা নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভাগের ভিতরে বসেই এমন দালালচক্র চালানো হচ্ছে। অভিযুক্ত মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ মৃন্ময় পাল অবশ্য বলেন, ‘আমি রোগী দেখি না। রোগীদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করি।’ প্রশ্ন উঠছে, হাসপাতালের চিকিৎসকদের মদত ছাড়া সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ ঢোকার সাহস পান কীভাবে? মেডিকেল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক এমন অভিযোগ শুনে অবাক। তিনি বলেছেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? আমি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
মেডিকেলে দালালচক্র নতুন কিছু নয়। প্রতিটি বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, ব্লাড ব্যাংক, সিটি স্ক্যান, সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি সহ সমস্ত পরিষেবা ক্ষেত্রেই দালালদের রমরমা কারবার। অভিযোগ, এই দালালচক্রের সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের একটা বড় অংশের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এঁদের মদতেই দালালরা রোগীকে এখান থেকে ফুসলিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য বাইরের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়া, ভালো চিকিৎসার জন্য নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেন। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা, এমআরআই, সিটিস্ক্যান সহ বিভিন্ন পরিষেবা দ্রুত পাওয়ার জন্য দালালরা রোগীর কাছে মোটা টাকা নিয়ে থাকেন। ফলে দালালদের সঙ্গে হাসপাতালের যোগসূত্র কারও অজানা নয়। আবার নেফ্রোলজি বিভাগে কর্মরত এক চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক নিয়মিত বহির্বিভাগে বসে রোগীকে ফুসলিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন ঘটনাও কর্তৃপক্ষের অজানা নয়।
এবার বিতর্কে নিউরোলজি বিভাগ। সেখানে বেশ কিছুদিন ধরে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বহির্বিভাগ সামলাচ্ছেন। সেখানে হাতেগোনা দু’একজন সিনিয়ার রেসিডেন্ট থাকেন বটে, কিন্তু রোগী দেখে ওষুধ লেখা, কোথায় ওষুধ পাওয়া যাবে, কী কী পরীক্ষা কোথায় করতে হবে সেসব পুরোটাই মৃন্ময় পাল নামে ওই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ করেন। সপ্তাহে দু’দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার এবং শুক্রবার সুপারস্পেশালিটি ব্লকে নিউরোলজি বহির্বিভাগ চলে। অভিযোগ, এই বিভাগের চিকিৎসকরা নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। বরং তাঁরা এই ধরনের মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভকে সেখানে বসিয়ে বিভাগ চালাচ্ছেন। যদিও নিউরোলজির বিভাগীয় প্রধান ডাঃ অমর মিশ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মৃন্ময় পাল নামে কেউ বহির্বিভাগে বসেন না বলে জানিয়েছেন।
অভিযোগ, বিভাগের সিনিয়ার চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে এই মৃন্ময় বহির্বিভাগে বসে রোগীদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করানোর কথা বলছেন। অপারেশনের প্রয়োজন হলে বেসরকারি হাসপাতালের কথা বলছেন। এই পরীক্ষাগুলি কোন বেসরকারি ল্যাবে করাতে হবে সেটাও নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন। এভাবেই দিনের পর দিন নিউরোলজি বিভাগ চলছে।