মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি : মুদির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এলাকারই এক বধূকে গুলি করে মারার চেষ্টা করা হল মঙ্গলবার রাতে। ঘটনাটি ঘটেছে নকশালবাড়ি থানার অন্তর্গত তোতারামজোত নুরি চক এলাকায়। আর তাতে নাম জড়িয়েছে সেই এলাকারই ‘পরিচিত দুষ্কৃতী’ মহম্মদ সফিক ওরফে সেভেনের। ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে চম্পট দিয়েছে সেভেন। পুলিশ খুঁজছে তাকে। আর সেই বধূ অক্ষত থাকলেও ব্যাপক আতঙ্কিত। পরিস্থিতি সামলাতে এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাফও নেমেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। রেশমা খাতুন নামের ওই বধূর বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকায় সেভেন। সেই মহিলাও প্রাণভয়ে ধস্তাধস্তি করেন। তার ফলে আগ্নেয়াস্ত্রের নল সরে যায়। ততক্ষণে ট্রিগার টিপে দিয়েছে সেভেন। গুলি লাগে মাটিতে। রেশমার সঙ্গেই ছিল তাঁর দুই সন্তান। তাদের চোখের সামনেই ওই ঘটনা ঘটেছে। ভয়ে তারাও বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। গুলির শব্দে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা নকশালবাড়ি থানার পুলিশকে খবর দেয়। বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্তকে খুঁজতে চিরুনি তল্লাশি চলে। পুলিশ প্রথমেই হানা দেয় সেভেনের বাড়িতে। সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। তারপর এলাকায় তল্লাশি অভিযানে নেমেছে। তবে দুই ঘণ্টা তল্লাশির পরেও অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এব্যাপারে জানতে চেয়ে নকশালবাড়ি থানার ওসি ওয়াসিম বারিকে ৩ বার ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এসডিপিও নেহা জৈনকে ২ বার ফোন করা হয়েছিল। ফোন ধরেননি তিনিও।
রেশমা ও সেভেনের বাড়ি একই এলাকায়। তবে তাঁদের মধ্যে পুরোনো কোনও বিবাদ ছিল না বলে খবর। এদিন রেশমা তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে রাস্তার ধারে একটি মুদিখানায় জিনিসপত্র কিনতে যান। আর সেভেন বাড়িতে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদের পর সেই দোকানের সামনে উপস্থিত হয়। স্থানীয়রা বলছেন, তারপরেই মহিলার সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে সেই দুষ্কৃতী। আচমকা গুলি চালিয়ে দেয়। শোরগোল শুরু হতেই সে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গুলির শব্দে ভয় পেয়ে মহিলা চিৎকার করতে থাকেন। রেশমা বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওর কোনও বিবাদ নেই। এর আগে অন্য জায়গায় সফিক ঝগড়া করে সেখানে এসেছিল। দোকানের সামনে এসে আমাকে হঠাৎ দুই থাপ্পড় মারে। আমার ক্ষমতা দেখবি বলতে বলতে আগ্নেয়াস্ত্র বুকে ঠেকিয়ে দেয়। এরপর সেটা সরাতে গিয়ে এক রাউন্ড গুলি চালায়। আগ্নেয়াস্ত্র সরাতে গিয়ে আমার হাতের চুড়ি ভেঙে যায়।’ আতঙ্কিত ওই মায়ের প্রশ্ন, ‘কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছি। আমার সন্তানদের সামনে গুলি চলেছে। আমার দুই বাচ্চার গায়ে গুলি লাগতে পারত৷’
যেখানে এই কাণ্ড ঘটেছে, সেই দোকানের সামনেই বাড়ি সেভেনের। স্থানীয় বাসিন্দা আমানত আনসারি বলেন, ‘বাড়ি থেকেই ঝগড়া করে বেরিয়েছিল ও। তারপরেই দোকানের সামনে ঝামেলা শুরু করে।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, সেভেনের কাছে নাকি সবসময় আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। এদিনের ঘটনার পর তাই তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন।