শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: জলপাইগুড়ি জেলায় যক্ষ্মার চোখরাঙানি দীর্ঘদিনের। বেশিরভাগ রোগীই চা বাগানের। যে কারণে চা বলয়কে পাখির চোখ করে জেলা থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে আদা-জল খেয়ে নেমেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়, সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আনা, সচেতনতার প্রসারের পাশাপাশি আক্রান্তরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায়, এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নাগরাকাটার ব্লক (Nagrakata) স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে সুলকাপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স সহ ব্লকের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেরাই একাজে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা ৪১ জন ব্যক্তিগতভাবে মোট ৪৪ জন যক্ষ্মা আক্রান্তকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। প্রতি মাসে একবার করে নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী আক্রান্তদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্যোগটির সূচনা হয় মঙ্গলবার। এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রত্যেকে নিক্ষয় মিত্র হিসেবে পরিচিত হবেন। এদিন সুলকাপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে আয়োজিত কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জলপাইগুড়ির উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ৩ তথা জেলা যক্ষ্মা আধিকারিক ডাঃ সুদীপ্ত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি যক্ষ্মা আক্রান্তদের পুষ্টিকর খাবারও অত্যন্ত জরুরি। চা বাগানের অনেকেই দুঃস্থ্। সে কারণে এই সহযোগিতা যে যক্ষ্মারোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অন্যতম হাতিয়ার। এভাবেই সবাই এগিয়ে এলে যক্ষ্মামুক্ত জেলা গড়া অবশ্যই সম্ভব।’
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ মোল্লা ইরফান হোসেন বলেন, প্রথমে আমরা এগিয়ে এলাম। এবারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের প্রতিও একই আহ্বান রাখা হবে।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রেই জানা গিয়েছে বর্তমানে জলপাইগুড়িতে প্রতি বছর প্রায় ৩০০০ যক্ষ্মারোগী চিহ্নিত হন। বছরে মৃত্যু হয় গড়ে ১৫০ জনের। চিহ্নিত মৃত্যুর ঘটনাগুলি চা বাগান এলাকা থেকেই বেশি। স্বাস্থ্য দপ্তরের পর্যবেক্ষণে জলবায়ু, জীবনশৈলী, আর্থিক অসচ্ছলতা, অসচেতনার মতো নানা বিষয় রোগটির বাড়বাড়ন্তের মূল কারণ। নাগরাকাটা ব্লকে এই মুহূর্তে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা ১৫০-এর মতো। বছরে মৃত্যু হয় গড়ে ৫-১০ জনের। আক্রান্তদের বেশিরভাগই চা বাগান ঘেরা লুকসান ও চম্পাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার।
এদিন যক্ষ্মারোগীদের হাতে এক মাসের জন্য প্রয়োজনীয় সয়াবিন, ডিম, ছোলা, বাদাম, মশুর ডাল, ছাতু, ঘি তুলে দেওয়া হয়।