নাগরাকাটা: একসময় তাঁর সুশ্রুশাতেই সুস্থ হয়েছেন বহু রোগী। কিন্তু অবসরের পর নিজের মানসিক ভারসামহীন ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে না পেরে কার্যত মৃত্যুর দোড়গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন নাগরাকাটার ভগতপুর চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত নার্স শুক্লা চক্রবর্তী। কোনওরকমে দু’জনে বেঁচে রয়েছেন। তাও আবার প্রতিবেশীদের দাক্ষিণ্যে। এক বেলা খেলে বাকী দু’বেলা কিছু যে জুটবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বাগানের যে কোয়ার্টারের এক চিলতে ঘরে মা-ছেলে থাকেন সেটার পরিস্থিতি কার্যত নরককুণ্ড। আলো নেই, পাখা নেই, পানীয় জলটুকুও কেউ দিয়ে গেলে জোটে। ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা বাড়িতে ঘরের মেঝেতেই শুয়ে থাকেন দু’জনে। মৃত্যুপথযাত্রী দু’জনকে কীভাবে বাঁচাবেন এখন তা ভেবে কোনও কূলকিনারা পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
টানা ৩০ বছর ভগতপুর চা বাগানের সেন্ট্রাল হাসপাতালে নার্সের কাজ করে বছর তিনেক আগে শুল্কা চক্রবর্তী অবসর নেন। তাঁর দুই সন্তান। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে বিক্রমকে নিয়েই থাকেন। কিন্তু ছেলের মানসিক রোগ দেখা দেয়। কিছুটা চিকিৎ চালালেও একটা সময় শুক্লা দেবীও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর থেকেই তাঁদের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। একদিকে নিজের অসুস্থতা ও অন্যদিকে ছেলের জটিল সমস্যা। দু’জনকেই ঘরবন্দী করে দেয়। এখন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে বিক্রমের চিকিৎসা। প্রতিবেশীরা বাড়ির জানালা দিয়ে রুটি, বিস্কুট কিবা অন্য খাবার দিয়ে যান। তা খেয়েই বেঁচে থাকেন মা ও ছেলে। শুক্লাদেবী অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রতিবেশীরাই চিকিৎসা করান। বাগানের চিকিৎসক ডাঃ সুশীল কুমার সিনহা জানান, মা ও ছেলে দু’জনেরই পরিপূর্ণ চিকিৎসা প্রয়োজন। ওঁদের খাওয়া দাওয়া জোটানোও এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় ছেলেটি মা’কে মারধর করে। ভয়ে ঢোকেন না প্রতিবেশীরাও। এহেন পরিবারটির কী হবে তা ভেবেই এখন ঘুম উড়েছে এলাকাবাসীর। শুক্লাদেবী নিজেও ক্লান্তি জড়ানো কন্ঠে জানান, আমরা তো বাঁচতে চাই, কিন্তু প্রতিবেশীরা আর কতদিন দেখবে?