রহিদুল ইসলাম, চালসা : পাহাড়ে টানা বৃষ্টির জেরে জল বেড়েছে মূর্তি নদীর। জলের স্রোতও অনেকটা বেশি। এই পরিস্থিতিতে একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই মূর্তি নদীতে নেমে স্নান করছে ছোট থেকে বড় সকলেই। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরাও বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নেমে স্নান করছেন। ২০১৭ সালে বর্ষার মরশুমে মূর্তি নদীতে স্নান করার সময় তলিয়ে যান এক ব্যক্তি। ১২ দিন পর মূর্তি সেতুর নীচ থেকে ওই ব্যক্তির পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য বর্ষার মরশুমে মূর্তি নদীতে স্নান বন্ধের দাবি উঠছে পরিবেশপ্রেমীদের তরফে। মাটিয়ালির বিডিও অভিনন্দন ঘোষ বলেন, ‘ব্লক প্রশাসনের তরফে মূর্তি নদীতে কাউকে না নামার জন্য জনগণকে সচেতনতার পাশাপাশি বোর্ডও লাগানো হবে। মূর্তি সহ সংলগ্ন এলাকার রিসর্টে থাকা পর্যটকদেরও সচেতন করা হবে।’
মাটিয়ালি ব্লকের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র মূর্তিতে রোজ বহু মানুষ বেড়াতে আসেন। পর্যটকরাও সেখানে ভিড় করেন। ভরা বর্ষাতে নদীতে স্নান করার বিরাম নেই। বাদ নেই স্কুল পড়ুয়ারাও। পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই মুহূর্তেই নদীর জলস্তর বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে নদীতে স্নানের সময় যে কোনও সময় বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এলাকার পরিবেশপ্রেমী সাবুল হক বলেন, ‘পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির ফলে মূর্তি নদীর জল অনেকটাই বেড়েছে। অনেকেই নদীতে নেমে স্নান করছেন। স্বাভাবিকভাবেই যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’ এই মরশুমে মূর্তি নদীতে স্নান বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। রিসর্ট মালিকদের সংগঠন গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তজমল হকের কথায়, ‘বর্তমানে যেভাবে মূর্তি নদীর জল বেড়েছে তাতে নদীতে নেমে স্নান করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরাও সংগঠনের তরফে বিভিন্ন রিসর্টে থাকা পর্যটকদের নদীতে স্নান না করার জন্য আবেদন জানাব।’ এই বিষয়ে মাটিয়ালি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হোসেন হাবিবুল হাসান বলেন, ‘বর্ষার মরশুমে কেউ যাতে মূর্তি নদীতে নেমে স্নান না করেন সেই বিষয়ে প্রশাসনের তরফে জনগণকে সচেতন করা হবে। বন দপ্তরকেও এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হবে।’
মূর্তি নদীর যে এলাকায় জনগণ নেমে স্নান করেন সেই এলাকাটি চালসা রেঞ্জের পানঝোরা বিটের অন্তর্গত। চালসার রেঞ্জ অফিসার প্রকাশ থাপা বলেন, ‘কেউ যাতে বিনা অনুমতিতে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ না করে, তার জন্য বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। এই মরশুমে কেউ যাতে মূর্তি নদীতে নেমে স্নান না করেন তার জন্য বন দপ্তরের তরফে মূর্তিতে সচেতনতামূলক বোর্ড লাগানো হবে। পর্যটকদেরও সচেতন করা হবে।’ মূর্তি নদীতে স্নান করতে আসা ময়নাগুড়ির তরুণ শ্যামল রায়, অনিল রায় প্রমুখ জানান, আগের তুলনায় মূর্তি নদীর জল অনেকটাই বেড়েছে। বেড়েছে জলের স্রোতও। পাহাড়ি মূর্তি নদীতে স্নান করে দারুণ মজা। তবে বর্ষার মরশুমে আর এই নদীতে স্নান করতে আসা যাবে না বলে জানান তাঁরা।