মুল্লানপুর: উৎকণ্ঠার প্রহর কাটিয়ে স্বস্তির জয়। ২২৮ রানের পুঁজি নিয়েও হারের আশঙ্কায় রক্তচাপ ক্রমশ বাড়ছিল। ডাগআউটের পাশে আরামকেদারাও তখন ‘কাঁটা’ মনে হচ্ছিল সপুত্র বসে থাকা মালকিন নীতা আম্বানির। বোলিং কোচ লাসিথ মালিঙ্গা, হেডকোচ মাহেলা জয়বর্ধনেরা তো বসেও থাকতে পারছিলেন না।
অজানা আশঙ্কায় ছটফট করছিলেন। জসপ্রীত বুমরাহ বাউন্ডারি লাইনের ধারে যেখানে ফিল্ডিং করছেন, সেখানেও পৌঁছে যান জয়বর্ধনে। ‘ছাত্রকে’ কিছু নির্দেশ দেওয়ার চেষ্টা। জবাবে বুমরাহ হাবেভাবে যেন বুঝিয়ে দেন, চিন্তা করার কিছু নেই। আমার কাজটা আমি জানি।
শুধু শরীরী ভাষায় নয়, বল হাতে তা করেও দেখালেন। বাকি বোলারদের ব্যবহার করে বি সাই সুদর্শন-ওয়াশিংটন সুন্দরের বিস্ফোরণে ব্রেক লাগানো যাচ্ছিল না। নিরুপায় হার্দিক পান্ডিয়া ১৫তম ওভারে বল তুলে দেন বুমরাহর হাতে। ফল হাতেনাতে। চতুর্থ বলটাই নিখুঁত ইয়র্কার। বিস্ফোরক মেজাজে এতক্ষণ ব্যাট ঘোরানো সুন্দর যার হদিসই পাননি।
ব্যাটের নীচ দিয়ে সোজা উইকেট ভেঙে দেয়। ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান সুন্দর। বুমরাহর যে ম্যাজিক বলে ম্যাচের রং বদল। আশঙ্কার কালো মেঘ কেটে আশার কিরণ মুম্বই শিবিরে। প্রাক্তন পেসার বরুণ অ্যারনের কথায়, বুমরাহ হল এমন একটা ভ্যাকসিন, যা সমস্ত রোগের প্রতিষেধক। সব রোগে কাজ করে!
বুমরাহর ঘাতক ইয়র্কারে গুজরাট টাইটান্সের স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে বরুণ অ্যারন বলেছেন, ‘বুমরাহ এমন একটি অ্যান্টিডোট, ভ্যাকসিন, যে কোনও বোলিং রোগ সারাতে সক্ষম যা। আপনার যদি উইকেট দরকার লাগে, সেখানেও বুমরাহ। ঠিক উইকেট দিয়ে যাবে। রান আটকাতেও বুমরাহ। অসাধারণ বোলার। আমি আছি, মাহেলা জয়বর্ধনেকে যেন সেই আশ্বাস দিচ্ছিল।’
বুমরাহ-বন্দনায় মজে এবি ডিভিলিয়ার্সও। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এবি বলেছেন, ‘শেষ স্পেলে বুমরাহর আসার আগে আমি ছেলেকে বলছিলাম, ম্যাচ এখনও শেষ হয়নি। এখনও বুমরাহর বল রয়েছে। আরও একবার বুঝিয়ে দিল, কেন ও অন্যতম সেরা।’
এবির কথার সুর মুম্বই অধিনায়ক হার্দিকের গলায়ও। মেনে নেন, হাতে বুমরাহর মতো একজন থাকা মানে যে কোনও অধিনায়কের কাছে বিলাসিতা। যখন মনে হবে ম্যাচ বেরিয়ে যাচ্ছে বুমরাহর হাতে বল তুলে দাও। বাকি কাজ হয়ে যাবে। ঊর্ধ্বমুখী মুম্বইয়ের হাউসিং প্রাইসের মতো তাঁদের কাছে মূল্যবান বুমরাহ।
ডেথ ওভার পর্যন্ত বুমরাহকে রাখার পরিকল্পনা থাকলেও আগেই আনতে হয়। যে প্রসঙ্গে হার্দিকের যুক্তি, স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। লক্ষ্য ছিল, শেষ কয়েক ওভারে গুজরাটের টার্গেট যথাসম্ভব বাড়াতে হবে। সেই ভাবনা থেকে বুমরাহকে আগে আনা। বাকিটা সবার সামনে। ১৫তম ওভারে সুন্দরকে আউট করার পর ১৮ নম্বর ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে হার্দিকের দেওয়া দায়িত্ব সেরে দেন বুমরাহ।
জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে আবার গান বেঁধেছেন হার্দিক। টিম হোটেলে ফিরে নতুন সতীর্থকে নিয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক গেয়ে ওঠেন, ‘জনি! জনি! জনি বেবি! তেরি মেরি হ্যায় কাহানি…।’ হার্দিকের হিন্দিতে গাওয়া যে গানের মানে বুঝতে না পারলে বেয়ারস্টো পুরোদস্তুর মজা নিলেন। পরে বলেন, কী বুঝতে পারিনি। তবে সবাই মিলে ওর সঙ্গে তাল দিয়েছেন।
কাজ এখনও বাকি। আরও জোড়া হার্ডল। আগামীকাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে পাঞ্জাব কিংসকে হারাতে পারলে ফাইনালের টিকিট। যেখানে প্রতিপক্ষের জন্য অপেক্ষায় বিরাট কোহলির স্পর্শে উজ্জীবিত রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। তবে মুল্লানপুরে গুজরাট-বধটাকে চেটেপুটে নিলেন মুম্বই শিবির। ম্যাচ শেষে নীতা আম্বানিকে দেখা গেল হার্দিকের গাল টিকে আদর করতে। বাকি দুই হার্ডল অতিক্রম করলে, উৎসবের মেজাজ যে আরও বাড়বে সন্দেহ নেই।