মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: নৃশংসতার নজির তৈরি হল নিউ জলপাইগুড়িতে। ট্রেনের পরিত্যক্ত কামরায় বন্ধুর নাবালিকা মেয়েকে গামছা দিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। রেল পুলিশে এনিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার কুনওয়ারভূষণ সিং জানান, নির্দিষ্ট আইনে মামলা রুজু হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীকে ধরা হবে। একজন নাবালিকাকে ফাঁকা জায়গায় এনে ধর্ষণের পথ ফেলে চলে এলেও কীভাবে সবটা নজর এড়িয়ে গেল রেলকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের, এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রেলকেও। জানা গিয়েছে, ১৪ বছর বয়সী মেয়েটির বাবা এনজেপির একটি হোটেলে রান্না করেন। বাড়ি একই এলাকায়। মা পেশায় পরিচারিকা। সোমবার দিনেরবেলা কেউই বাড়িতে ছিলেন না। একা ছিল নাবালিকাটি। তার মায়ের অভিযোগ, দুপুর ১টা নাগাদ অভিযুক্ত তাদের বাড়িতে আসে, ওকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে জোড়াজুড়ি শুরু করে। প্রথমে মেয়ে যেতে না চাইলে পরে রাজি হয়। এরপর বাড়ি থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই বের হয় অভিযুক্ত।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এনজেপি ডিএস কলোনির রেল ইয়ার্ডে ফাঁকা জায়গায় নাবালিকাকে নিয়ে যায় অভিযুক্ত। সেখানে একটি পরিত্যক্ত রেলের বগিতে তুলে ধর্ষণ করে।
কাঁদতে কাঁদতে মঙ্গলবার নির্যাতিতার মা বলছিলেন, ‘আমার মেয়েটার হাত মুখ বেঁধে ধর্ষণ করেছে ওই লোকটা, তারপর সেখানেই ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।’ এমনকি কাউকে কিছু বললে নাবালিকাকে খুন করা হবে বলেও অভিযুক্ত হুমকি দিয়েছিল বলে দাবি। নাবালিকার মা কাজ সেরে বিকেলে বাড়ি ফিরে মেয়েকে ঘরে না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। হন্নে হয়ে খুঁজছিলেন সমস্ত সম্ভাব্য জায়গায়। অবশেষে মাঝ রাস্তায় মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়। মায়ের বর্ণনায়, ‘অনেক খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ এক জায়গায় দেখা হয়। কাঁদতে কাঁদতে মেয়ে বাড়ির দিকে আসছিল, সেই বিধ্বস্ত লাগছিল দেখতে। আমি ওকে নিয়ে যাই। তারপর সব খুলে বলে।’
ঘটনাটি জানাজানির পর ক্ষোভ ছড়ায় এলাকায়। পড়শিরা নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তের কঠিন শাস্তির দাবি করেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় স্থানীয়দের সাহায্যে মেয়েকে নিয়ে এনজেপি থানায় যান মেয়েটির মা। পুলিশ তাদের নিয়ে আসে এনজেপি জিআরপি থানায়। রাতেই অভিযোগ দায়ের করা হয়। পাশাপাশি নির্যাতিতাকে পাঠানো হয় জলপাইগুড়ি সেফ হাউসে। মঙ্গলবার শারীরিক পরীক্ষার পর তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দুপুরে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তার মা।
অভিযুক্তের সঙ্গে বহু বছরের সম্পর্ক নাবালিকার বাবার। আগে তারা দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে থাকত। তার বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিনের চেনা জানা তাই দুই বাড়ির মধ্যে আসা যাওয়া ছিল। সেই সুযোগেই সোমবার দুপুরে নাবালিকার বাড়িতে এসেছিল অভিযুক্ত।