সৌরভ রায়, কুশমণ্ডি: নিজের বিয়ে আটকাতে কখনও স্কুলের হেডমাস্টারের কাছে করুণ আর্জি জানাচ্ছে নাবালিকা, কেউ আবার সরাসরি থানায় এসে সাহায্য চাইছে পুলিশের। কখনও বা বিয়ে বন্ধ করতে বাড়ি থেকে পালাচ্ছে ভয়ার্ত কিশোরী। কুশমণ্ডিবাসীর কাছে ছবিটা এখন চেনা। তবে এর বাইরের পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর। গত ৬, ৭ এবং ৯ মে তিনদিনে কুশমণ্ডি ব্লকের নানা এলাকায় মোট সাতজন নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করল প্রশাসন।
আর এমন ঘটনা সামনে আসতেই উদ্বেগ বেড়েছে সমাজকর্মীদের। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় কুশমণ্ডি ব্লকে নাবালিকার বিয়ে সংখ্যার হিসেবে বাকি ব্লকগুলি থেকে এক ধাপ এগিয়ে। গত তিন বছরে সে সংখ্যাটা লাফিয়ে বাড়ছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যানে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। দপ্তর সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ব্লকে নাবালিকা গর্ভবতীর সংখ্যা উদ্বেগজনক। প্রশাসনের তরফ থেকে অবশ্য নাবালিকা বিয়ে বন্ধের খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বন্ধ হচ্ছে না এই সামাজিক ব্যাধি।
গত ৬ মে চাইল্ডলাইন মারফত খবর পেয়ে কুশমণ্ডি ব্লকের দেউল এবং বেরইল পঞ্চায়েত এলাকায় তিনটি নাবালিকা বিয়ের আয়োজন বন্ধ করেছে ব্লক প্রশাসন। ছাদনাতলায় তখন সানাইয়ের সুর বাজছিল। আর কিছুক্ষণ পরেই ঢুকে পড়বে বরপক্ষের গাড়ি। কিন্তু তার কিছুক্ষণ আগেই ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের গাড়ি পৌঁছে গেল মণ্ডপের কাছে। গাড়ি থেকে পুলিশ ও অনাহূত আমন্ত্রিতদের দেখে প্রথমেই মাইকের শব্দ কমে গেল। এর পরেরটা শুধু চোখের জল ফেলা। বরপক্ষ আমন্ত্রিত সকলের জন্য তৈরি রান্না পরে রইল কিছুটা উনুনে আর কিছুটা পাত্রে।
এরকম ঘটনা কুশমণ্ডি, হরিরামপুর দুই ব্লক মিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি। সম্প্রতি একরাতে পরপর তিনজন নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। তবে উদ্বেগের পারদ আকাশছোঁয়া। প্রশ্নও উঠেছে অনেক।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের কুশমণ্ডি এলাকার সম্পাদক আশিস দাস এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তার বক্তব্য সামিয়ানা খাটিয়ে নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে। অথচ এলাকায় কেউ জানে না। তাঁর বক্তব্য, ‘পঞ্চায়েতের সদস্য কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ভূমিকা কী এটা স্পষ্ট করা উচিত প্রশাসনের।’ সমাজকর্মী ও কবি সুরজ দাসের বক্তব্য, ‘সর্বত্র প্রতিটি মানুষের একযোগে প্রতিবাদ না করলে এই সামাজিক ব্যাধি বন্ধ করা কষ্টকর।
প্যারা লিগ্যাল ভলান্টিয়ার উমেদ আলি জানান, আরও বেশি বেশি করে সচেতনতার কর্মসূচি করা দরকার। বিডিও নয়না দে-র বক্তব্য, ‘পঞ্চায়েত স্তরে নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আইন লঙ্ঘন করলে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ একধাপ এগিয়ে কুশমণ্ডি থানার আইসি তরুণ সাহা বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুলগুলিতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নাবালিকা বিয়ের ঘটনা সামনে এলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাউকেই ছাড়া হবে না।’