বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: ‘মেয়ে পড়াশোনায় ভালো ছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া আমার মেয়ের জীবনটাকে তছনছ করে দিল।’ রায়গঞ্জ শহরের এক নাবালিকাকে অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্তকে ভিনরাজ্য থেকে গ্রেপ্তার করে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে এল পুলিশ। আর সে ঘটনায় এমনই প্রতিক্রিয়া অপহৃত নাবালিকার মায়ের। অভিযোগ, নাবালিকার চার মাসের নবজাতককে মোটা টাকায় উত্তরাখণ্ডের এক বাসিন্দার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ১১ মে রায়গঞ্জ শহরের ১৬ বছরের এক নাবালিকা অপহৃত হয়। ওই ঘটনায় রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নাবালিকার মা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমে চলতি মাসের ২ মে ভিনরাজ্য থেকে অভিযুক্ত তরুণকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের দাবি, ওই নাবালিকার সঙ্গে ধৃতের ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়। সেখান থেকেই প্রেম পর্ব শুরু। ২০২৩ সালে পড়তে যাওয়ার সময় ওই মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ দু’বছর পর পুলিশের জালে ধরা পড়ে অভিযুক্ত। ধৃত তরুণ এবং ওই নাবালিকা ভিনরাজ্যের একটি শপিং মলে কাজ করতেন বলে পুলিশসূত্রে জানা গিয়েছে।
ভিনরাজ্য থেকে অভিযুক্তকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে আসা হয় রায়গঞ্জ থানায়। শনিবার ধৃতকে রায়গঞ্জ জেলা আদালতে পেশ করা হয়। তাঁকে অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সেশন জজ কোর্টে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি অপহৃত নাবালিকাকেও জবানবন্দির জন্য আদালতে আনা হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অপহৃত নাবালিকার একটি চার মাসের নবজাতক সন্তান রয়েছে। ওই সন্তানকেও মোটা টাকার বিনিময়ে উত্তরাখণ্ডের এক বাসিন্দার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুর জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘ধৃতের বিরুদ্ধে পকসো ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বিচারক ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। নাবালিকাকে তুলে দেওয়া হয়েছে পরিবারের হাতে।’
ওই নাবালিকার মায়ের বক্তব্য, ‘মেয়ে বাড়ি থেকে প্রাইভেট টিউশনে গিয়েছিল, তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। রায়গঞ্জ থানায় প্রথমে নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করি। কিছুদিন পর মোবাইল মারফত জানতে পারি, আমার মেয়েকে ভিনরাজ্যে লুকিয়ে রেখেছে তরুণ। তার নাম, ঠিকানা সব পেয়ে যাই। পুলিশ তদন্তের পর গতকাল আমার মেয়েকে উদ্ধার করে। আমার মেয়ে পড়াশোনায় ভালো ছিল। কিন্তু ফেসবুক আমার মেয়ের জীবনটাকে তছনছ করে দিল।’ তাঁর আরও দাবি, ‘পুলিশ মারফত জানতে পেরেছি আমার মেয়ের চার মাসের নবজাতক সন্তান ছিল। সেই সন্তানকেও মোটা টাকার বিনিময়ে ওই তরুণ বিক্রি করে দিয়েছে।’ তদন্তকারী অফিসার দীপক গোস্বামী সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করেছে।