মাথাভাঙ্গা: ২১ সাল থেকে ২৫ সাল পর্যন্ত সংগঠনের কোথায় সাফল্য কোথায় ত্রুটি, তা আপনাদের কাছে পরিষ্কার এবং খোলাখুলিভাবে জানাতে কোচবিহারের (Cooch Behar) মাথাভাঙ্গায় (Mathabhanga) এসেছি। বৃহস্পতিবার মাথাভাঙ্গার থানাপাড়ায় কংগ্রেসের মাঠে ডিওয়াইএফআইয়ের (DYFI) কোচবিহার জেলা ২০তম সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটা বলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee)। নিজের সংগঠনের ধারাবাহিক লড়াই আন্দোলনের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি এদিন ৪০ মিনিটের বক্তব্যে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তুলোধুনো করেন তিনি।
কোচবিহার জেলাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি চান কোচবিহার সহ এরাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীরা আগামীদিনে মাথা উঁচু করে বাঁচুক তাহলে আপনি চান বা না চান আপনার রাস্তা বাম দিকে যাবে। আর যদি চান লুটের রাজত্ব এখানে প্রতিষ্ঠিত হবে, তাহলে তৃণমূল বিজেপি যেদিকেই যান না কেন আমাদের কিছু বলার নেই।’ জেলার তরমুজ, ভুট্টা, টমেটো, লঙ্কা, আলু একাধিক ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার সমালোচনা যেমন তিনি করেছেন, তেমনি রাজ্যজুড়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বেহাল অবস্থা, ধর্মীয় উন্মাদনা এবং সাম্প্রদায়িক অশান্তির বিষয়গুলিও উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে।
২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য সরকারকে এক হাত নিয়ে মীনাক্ষী বলেন, ‘যাঁরা সাদাখাতা জমা দিয়েছেন, তাঁদের ফেল না করিয়ে সরকার অন্যায় করেছে। সরকার ঘুষ নেওয়ার কাউন্টার বন্ধ রাখলে আজ এই পরিস্থিতি হত না।’ তিনি বলেন, ‘অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। প্রতিদিন কোচবিহার জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছেন। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাও তুলে দিতে চাইছে।’ স্মার্ট মিটার বসানোর তীব্র প্রতিবাদ করেন মীনাক্ষী।
উকিল বর্মন প্রসঙ্গে মীনাক্ষী বলেন, ‘উকিল বর্মনের ছেলেকে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে এজেন্সির অধীনে কাজে দেওয়া হয়েছে। উকিল বর্মনের ছেলেকে কাজ দিয়ে উকিল বর্মনের যন্ত্রণা কি মিটে গিয়েছে? সমস্যা তো জমির। সেই সমস্যা মিটল কোথায়? উকিল বর্মন আর কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে নিজের জমিতে কাজ করতে যেতে চাইছেন না। তিনি জমির দাম চাইছেন। তিনি যে আওয়াজ তুলেছেন সেই আওয়াজ দেড় কোটি মানুষের যারা সীমান্ত এলাকায় থাকেন। এই দাবি বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে।
পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মীনাক্ষীর বক্তব্য, ‘পুলিশের সমস্ত কর্মকাণ্ড লিপিবদ্ধ হচ্ছে। পালাবদল যেদিন হবে সেদিন সব হিসেব হবে।’ সিভিক ভলান্টিয়ারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘নিজেদের আইএএস আইপিএসদের বাপ-বেটা ভেবো না। প্রতিদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোটরবাইক, টোটো, অটো থেকে গান্ধিজি না পেয়ে যে রাতে তোমাদের ঘুম আসছে না সেই অভ্যাস থেকে সরে এসো। কারণ বিপদে পড়লে দিদিমণি তোমাদের বলির পাঁঠা বানিয়ে দেবে। তা সে আনিস কান্ডই হোক বা আরজি কর।’
পাশাপাশি মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে মীনাক্ষী বলেন, ‘এলআইসির পয়সায় জেলা, রাজ্য তথা দেশের সেতু সহ নানা পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। মাইনাস ডিগ্রি তাপমাত্রায় গ্লেসিয়ারে দাঁড়িয়ে যাঁরা দেশকে রক্ষা করছে তাঁদের পায়ের জুতো আসছে এলআইসির পয়সায়। সারাদেশের মিড-ডে মিলের শিশুদের খাবার যে রাষ্ট্র সংস্থার অর্থে সংস্থান হয় সেই এলআইসিকে বেঁচে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’ এদিন তৃণমূল-বিজেপির আঁতাতের কথা বারবার উঠে এসেছে মীনাক্ষীর বক্তব্যে। সিবিআইয়ের বিভিন্ন মামলা মাঝপথে থমকে যাওয়ায় বিষয় তিনি তুলে ধরেন। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ হিংসা নিয়েও পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন মীনাক্ষী।