মাথাভাঙ্গা: স্কুলে কোথাও আছে নজরদারি আবার কোথাও নেই। ডাকঘরা হাইস্কুলের ঘটনার পরও হুঁশ ফেরেনি স্কুল কর্তৃপক্ষের। অধিকাংশ স্কুলেই মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকছে পড়ুয়ারা। দেখার কেউ নেই। ক্লাসে পড়ুয়ারা কী করছে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তা টেরই পাচ্ছেন না। মাথাভাঙ্গা শহরের তিনটি স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি রয়েছে। অভিভাবকদের একাংশ জানিয়েছেন, বর্তমানে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে তাঁরা নিরাপদ বোধ করছেন না। শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে ক্লাসরুমে মোবাইল ফোন ব্যবহার, পর্যবেক্ষণের অভাব- এসবই এমন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। ডাকঘরা হাইস্কুলের জনৈক পড়ুয়ার অভিভাবক দুলাল সিংহ বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। না হলে আগামী প্রজন্মকে বাঁচানো যাবে না। স্কুলে এখন সন্তানকে পাঠাতেই ভয় হয়।’
মাথাভাঙ্গার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক মনোজকুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমি সবসময় কোএড স্কুলগুলিকে গার্লস কমনরুম বাধ্যতামূলক রাখার কথা বলি। তবে তা যেন নামমাত্র না হয়ে কার্যকর হয়। শুনতে পেরেছি ঘটনাটি অফ পিরিয়ডে ঘটেছিল, যখন ছাত্রীরা গার্লস কমনরুমে না থেকে ক্লাসরুমেই ছিল। এই প্রেক্ষিতে সমস্ত কোএড স্কুলে গার্লস কমনরুমের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের নির্দেশ জারি করা হয়েছে।’
শীতলকুচি ব্লকের ডাকঘরা হাইস্কুলে ক্লাস চলাকালীন এক ছাত্রীকে সহপাঠী ছাত্রের শারীরিক হেনস্তার অভিযোগ ঘিরে হইচই শুরু হয়েছে। ঘটনা শুধু হেনস্তাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আরেক ছাত্র সেই ঘটনার ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায় (যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ)। ওই ঘটনায় শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকমহলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। চাপে পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করলেও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এই শাস্তি কি যথেষ্ট? ওই স্কুলের গেটে ইতিমধ্যেই পুলিশি নজরদারি শুরু করেছে।
যদিও ডাকঘরা হাইস্কুলের ঘটনার পরও নজরদারির অভাব যে স্পষ্ট তা স্কুলগুলিতে গেলেই দেখতে পাওয়া যায়। মাথাভাঙ্গা শহরের গুটিকয়েক স্কুলে যেমন মাথাভাঙ্গা হাইস্কুল, মাথাভাঙ্গা গার্লস হাইস্কুল ও বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে প্রতিটি ক্লাসে সিসিটিভি বসানো হয়েছে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা মনিটরের মাধ্যমে নজর রাখেন। তবে মহকুমার অধিকাংশ স্কুলেই এখনও এই ব্যবস্থা নেই। শীতলকুচির ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মহিষমুড়ি হাইস্কুলের মতো মহকুমার অনেক স্কুলেই সিসিটিভি ক্যামেরার কোনও ব্যবস্থাই নেই। অন্যদিকে, জোরপাটকিতে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো সিসিটিভি রাতের অন্ধকারে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সূর্যনাথ বসুনিয়া।
সরকার থেকে দেওয়ায় এখন পড়ুয়াদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই পড়ুয়ারা ক্লাসে মোবাইল ফোন নিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার জোরপাটকি হাইস্কুলের দশম শ্রেণিতে অভিযান চালিয়ে ৩৫টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সহকারী প্রধান শিক্ষক কানু বর্মন বলেন, ‘শীঘ্রই অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে।’ যদিও মাথাভাঙ্গা গার্লস হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মন্দিরা তালুকদারের কথায়, ‘স্কুলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ। গ্রামাঞ্চল থেকে আসা ছাত্রীদের ফোন কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যারা সংগ্রহ করে অফিসে জমা রাখে।’
বড়মরিচা দেলোয়ার হোসেন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘জটামারির ঘটনাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, নজরদারির সামান্য ঘাটতিতেই কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’ গোঁসাইরহাট হাইস্কুলের শিক্ষিকা অর্পিতা পাল, বাইশগুড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ দাস প্রমুখের মতে, প্রতিটি স্কুলে মোবাইল ফোন ব্যবহারে কঠোর নিয়ম এবং সর্বত্র নজরদারির ব্যবস্থা করা উচিত। তাঁদের আশঙ্কা, এখনই সতর্ক না হলে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।