Malda first academic heart | তালাবন্ধ দরজা, জরাজীর্ণ ভবন, বিস্মৃতির অতলে মালদা জেলার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র

Malda first academic heart | তালাবন্ধ দরজা, জরাজীর্ণ ভবন, বিস্মৃতির অতলে মালদা জেলার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


সৌম্যজ্যোতি মণ্ডল, চাঁচল: তালাবন্ধ দরজা। জরাজীর্ণ ভবন। দরজার পাশে ফলকে লেখা, ‘শ্রীশ্রী শ্যামসুন্দর দেবালয়, ন্যায়রত্ন চতুষ্পাঠী, কলিগ্রাম।’ ১৮১৩ সালে এটি ছিল মালদা জেলার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। যেটি মূলত ছিল একটি টোল।

চাঁচল-১ ব্লকের একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম কলিগ্রাম। একদা জেলার শিক্ষা এবং সংস্কৃতর পীঠস্থান ছিল এই স্থান। যে গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী এই গ্রামের গোস্বামীপাড়ার বড়বাড়ি। যেখানে গড়ে উঠেছিল জেলার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। গোস্বামী পরিবারের সদস্য বিশিষ্ট পণ্ডিত বিনোদচন্দ্র গোস্বামী তাঁদের বাস্তুভিটে বড়বাড়িতে শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘বড়বাড়ি টোল’। বিনোদবাবু কবিরাজি চিকিৎসার জন্যও খ্যাতনামা ছিলেন। তৎকালীন মালদা, দিনাজপুর, রংপুর এবং পূর্ণিয়া জেলার মানুষ তাঁকে কবিরাজ গোস্বামী নামে চিনতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাকেন্দ্রে প্রথমদিকে গোস্বামী পরিবার সহ এলাকার অন্যান্য পরিবারের ছেলেরা ব্যাকরণ এবং সংস্কৃতর শিক্ষালাভ করতেন। পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে তাঁর ছেলে কৃষ্ণরত্ন গোস্বামী পরিবার এবং এলাকার মধ্যে আবদ্ধ এই টোলকে সম্পূর্ণরূপে সংস্কৃতর শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেন ‘ন্যায়রত্ন চতুষ্পাঠী’। এই কৃষ্ণরত্নবাবু বাংলার নামকরা পণ্ডিত ছিলেন। শোনা যায়, ভাগবতের ১৮,০০০ শ্লোক অনর্গল আবৃত্তি করতে পারতেন।

পরবর্তীতে তাঁর ভাই শাস্ত্ররত্ন কৃষ্ণকেশব গোস্বামীও এই টোলের শিক্ষকতায় যুক্ত হন। ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় এই টোলের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দূরদূরান্ত থেকে বহু ছাত্রছাত্রী আসতেন শিক্ষালাভের জন্য। কৃতীরা আসতেন গবেষণার জন্য। ১৯১৫ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে এই টোল সংস্কৃত চর্চায় দেশজুড়ে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল। পণ্ডিতদের মধ্যে বিধুশেখর শাস্ত্রী, রায়রঞ্জন রায়, শরৎকুমার ভট্টাচার্য এখানেই শিক্ষালাভ করেছেন। পরবর্তীতে গোস্বামী পরিবারের উত্তরসূরিরা উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে গেলে টোল বন্ধ হয়ে যায়।

যে শিক্ষাকেন্দ্রের এমন গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, তৎকালীন সময়ে শিক্ষার প্রসারে যার অসামান্য অবদান রয়েছে, যেখানে এত গুণীজন শিক্ষালাভ করেছেন, তার ইতিহাস জানতেই পারছে না নতুন প্রজন্ম। ওই পরিবারের লোক এবং এলাকার মানুষের দাবি, প্রশাসনিকভাবে ভবনটি সংরক্ষণ করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, ‘সরকার উদ্যোগ না নিলে কয়েক বছর পর এই ভবন হয়তো ভেঙে পড়বে। এত বড় ইতিহাস চাপা পড়ে যাবে।’

জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মহম্মদ আতাউল্লার মন্তব্য, ‘এত গৌরবময় ইতিহাস এইভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এটাকে সংরক্ষণ করুক বা নতুনরূপে চালু করুক।’ গোস্বামী পরিবারের সদস্য রূপ গোস্বামীর বলেন, ‘আমরা সরকারকে চিঠি দেব। এই ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে এটা মানতে পারছি না।’

চাঁচলের বিধায়ক নিহাররঞ্জন ঘোষ শীঘ্রই এই শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন। সাংসদ খগেন মুর্মুর আশ্বাস, পরিবারের লোক এবং স্থানীয়রা লিখিত দিলে তৎপরতার সঙ্গে বিষয়টি তিনি দেখবেন।

রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব এবং জাদুঘর বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর রানা দেব দাসের বক্তব্য, ‘ওখানকার মানুষ আগে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাক। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *