কল্লোল মজুমদার, মালদা: দলবল নিয়ে মেয়েদের স্কুলে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে। তিনি আবার ওই স্কুলেরই পরিচালন কমিটির সভাপতি। রবিবার ওই হুমকির সিসিটিভি ফুটেজ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তা নিয়ে হইচই পড়ে যায় জেলায়। ভাইরাল হওয়া ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল নেতা সুবোধ রায় টিচার্স রুমে ঢুকে টিআইসির দিকে আঙুল তুলে চিৎকার করছেন। তিনি রীতিমতো মারমুখী অবস্থায় (ফুটেজ খতিয়ে দেখেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ)। বৃহস্পতিবার দুপুরের এই ঘটনায় হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী আরএন রায় বালিকা বিদ্যানিকেতনে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ঘটনায় নিন্দার ঝড় জেলায়, সরব শিক্ষা মহল। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে জেলা স্কুল পরির্শকের কাছে নালিশ জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা (টিআইসি) ঝুম্পা মজুমদার। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করছেন ওই তৃণমূল নেতা। তবে ঘটনা খতিয়ে দেখছে শিক্ষা দপ্তর।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতাদের ‘দাদাগিরি’র ঘটনা কম নয়। এতে নতুন করে যুক্ত হল হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী আরএন রায় বালিকা বিদ্যানিকেতনের নাম। স্কুল সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত স্কুলের এক শিক্ষিকার ছুটির আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। কয়েকজন শিক্ষিকা সিসিএলে থাকায় বর্তমানে স্কুলে শিক্ষিকা রয়েছেন ২০ জন। ছাত্রীর সংখ্যা ১,৯২০। যে কারণে ওই শিক্ষিকার সিসিএলের আবেদন এখন মঞ্জুর করা সম্ভব নয় বলে জানান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ঝুম্পা মজুমদার। যে কারণে ওই শিক্ষিকা টিআইসির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা সুবোধকে অভিযোগ জানান। বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা সুবোধ স্কুলে এসে টিআইসিকে একাধিক বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অভিযোগ, চিৎকার করে কথা বলার পাশাপাশি ওই তৃণমূল নেতা আঙুল উঁচিয়ে টিআইসির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একজন শিক্ষিকা চিৎকার করে কান্নাকাটি করছেন এবং পরিচালন সমিতির সভাপতি রীতিমতো আঙুল উঁচিয়ে টিআইসির উদ্দেশে নানা মন্তব্য করছেন, দেখা গিয়েছে ওই সিসিটিভি ফুটেজে।
ঘটনা প্রসঙ্গে টিআইসি রবিবার দাবি করেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর প্রায় তিনটা নাগাদ সুবোধবাবু তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলের বিভিন্ন ঘরে ঘুরে বেড়ান। সে সময় আমি আমার দপ্তরে বসে টিফিন করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার দপ্তরে ঢুকে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে বিভিন্নভাবে আমাকে অপমান করতে থাকেন। ৩৪ বছরের চাকরি জীবনে আমি এমন অপমানিত হইনি। আমি এবং আমার সহকারী শিক্ষিকারাও ঘটনায় শঙ্কিত। এই চেয়ারে বসার যোগ্যতা আমার নেই, এমন মন্তব্যও করেন তিনি।’ যদিও অপমানজনক কথাবার্তা বা হুঁশিয়ারি দেননি বলে দাবি করেছেন হবিবপুর ব্লকের আইএনটিটিইউসির সভাপতি ও স্কুলটির পরিচালন কমিটির সভাপতি সুবোধ। তাঁর পালটা অভিযোগ, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমানের মিড-ডে মিলের অভিযোগ পাচ্ছি। স্কুলের পড়াশোনা লাটে উঠেছে। শিক্ষিকারা দলবেঁধে ছুটি নিচ্ছেন। সে বিষয়ে টিআইসি বললে উনিই আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।’
হবিবপুর ব্লক অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রাণতোষ সাহার বক্তব্য, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। স্কুলের সমস্যার কথা জানতে পেরেছি। অবিলম্বে বিদ্যালয়ের সমস্ত সদস্যকে নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করা হবে।’ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বাণীব্রত দাস।