সৌরভকুমার মিশ্র, হরিশ্চন্দ্রপুর: ধরুন আপনি একটা তালিকা বানালেন, যার বিষয় হল কী কী হলে একটা হাসপাতালের বেহাল অবস্থা বলা যায়। সেখানে হয়তো আপনি পাঁচ-ছয়টি বিষয় রাখলেন। এরপর ঠিক করলেন বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে সার্ভে করবেন, যা যা মিল পাবেন তার পাশে টিক দেবেন। প্রথমেই আপনি এসে পড়লেন, মালদার (Malda) হরিশ্চন্দ্রপুর (Harishchandrapur) সদর এলাকার এক নম্বর ব্লকের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে এবার আপনি টিক মারা শুরু করলেন তো বটে, কিন্তু একটা সময়ে দেখলেন আপনার কাগজ শেষ হয়ে গেল। আপনি যা যা ভেবেছিলেন তার বাইরেও আরও অনেক জিনিস আপনি দেখে নিলেন। যেমন- রোগীদের বিছানার নীচে রয়েছে ছাগল-কুকুর-বিড়াল। আর তারা যে শুধু রয়েছে এমন নয়, বরং হাসপাতালের ভেতরেই মলমূত্র ত্যাগও করছে। এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়।
অথচ এই হাসপাতালের উপর হরিশ্চন্দ্রপুর-১ এবং ২ ব্লকের কয়েক লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। প্রতিদিন তিনশো থেকে চারশো রোগী হাসপাতালে আসেন। সেখানে বেড মাত্র ৬৫টি। রোগীদের অভিযোগ, পুরুষ এবং মহিলাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা নেই, ফলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন মহিলারা। হাসপাতালে কোনও নিরাপত্তারক্ষীও নেই। অভ্যন্তরের ছবি আরও ভয়ংকর, নল থেকে জল পড়ছে না, চারিদিকে আগাছা। শৌচালয়ের পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। ভেতরে নেই আলো। হাসপাতালের অভ্যন্তরেও আবর্জনা। পড়ে থাকছে ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ। রোগীরা পাচ্ছেন না বেডের চাদর। এছাড়া বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। এই হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন। যদিও তাজমুলের সাফাই, ‘এরকম তো হওয়ার কথা নয়। আমি অতি অবশ্যই বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি এবং কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেটা দেখা হবে।’
রোগীদের প্রশ্ন, নেতাদের অসুখ হলে তাঁদের টাকা আছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের এমন পরিস্থিতি হলে গরিব মানুষ কোথায় যাবে? এবিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ ডাঃ ছোটন মণ্ডল বলেন, ‘এই হাসপাতালের ক্যাপাসিটি ৬৫ বেডের। সেখানে রোজ ৩০০-৩৫০ রোগীর চাপ আমাদের সামলাতে হয়। বারবার পরিষ্কার করার পরও নোংরা হয়ে যাচ্ছে। সীমানা প্রাচীর নেই তাই এলাকার গবাদিপশু হাসপাতালে ঢুকে পড়ছে। স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানানো হয়েছে।’ তিনি আশা করছেন বিষয়টি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। সম্পূর্ণ ওষুধ হাসপাতাল থেকে রোগীদের দেওয়া সম্ভব নয়। তাই কিছু বাইরে থেকে কিনতেই হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসারত মাজারুল হকের অভিযোগ, ‘রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা করা হয় না, ওষুধ দেওয়া হয় না, চারিদিক অপরিচ্ছন্ন। বাথরুম ব্যবহার করা যায় না। বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেও কোন লাভ হয়নি।’
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে সুর চড়িয়েছেন বিজেপির উত্তর মালদার জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়ালা। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীমশাই কি হাসপাতালের এই বেহাল পরিস্থিতি নিয়ে জানেন না। নাকি নেই উন্নয়নের সদিচ্ছা। হাসপাতালে যে ওষুধ আসছে সেই ওষুধ রাতারাতি বাইরে বিক্রি হচ্ছে। এই পরিস্থিতির জবাব মানুষ দেবে।’