মালদা: ছাঁটাইয়ের তালিকায় রয়েছেন অনেক যোগ্য প্রার্থী। যেমন মালদার সুমন চক্রবর্তী, পিয়ালি শেঠ, টুবাই দাস, কিংবা বাপি মাহাতো। একদিকে যোগ্য হয়েও চাকরি হারানোর গ্লানি, অন্যদিকে অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা ভেবে গভীর হতাশা। আদালতের রায় ঘোষণার পর থেকে এই দুই যন্ত্রণাই কুঁড়ে খাচ্ছে তাঁদের।
ভালোবেসে ঘর বাঁধলেও ভালোবাসা ছিল না শিক্ষক দম্পতি সুমন চক্রবর্তী ও পিয়ালি শেঠের। ইংলিশবাজারের রামকৃষ্ণপল্লিতে একটি ভাড়া বাড়িতে থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, একদিন একটা সুন্দর সাজানো-গোছানো ফ্ল্যাট হবে তাঁদের। চাকরি পাওয়ার পর স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে সম্প্রতি মোটা অঙ্কের টাকা ঋণও নেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎই সব যেন এলোমেলো হয়ে গেল। দুজনেরই চাকরি চলে যাওয়ায় ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন তাঁদের অধরাই থেকে গেল।
সুমনবাবু বলেন, ‘আমি ২০১১ সালেই শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু পরে বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে আসার জন্য ২০১৬-তে আমি ফের পরীক্ষায় বসি ও আড়াইডাঙা ডিবিএম উচ্চবিদ্যালয়ে যোগ দিই। আজ বিনাদোষে আমার সবকিছুই হারিয়ে গেল।’
মালদার টিপাজনি এলাকার টুবাই দাস ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে হাতিমারি হাইস্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজ দুপুর থেকে ফের সব হাসি মুছে গেছে। দিনভর কারও সঙ্গে তেমন কথা না বললেও একা একা টুবাই স্বগতোক্তি করে চলেছেন, ‘আমি যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছি। অন্যায় কিছু করিনি। তবুও আমাকে চাকরি ছাড়তে হচ্ছে। এই কি বিচার!’
মাত্র ২৪ বছর বয়সে দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতার চাকরি পান মালদার বাপি মাহাতো। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছিলেন বলে দাবি করে বাপি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক লহমায় সব জীবনযুদ্ধ থেমে গেল। ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছি। খুব কষ্ট করে মা আমাকে মানুষ করেছেন। মা বলতেন, একদিন আমিই নাকি সংসার সামলাব। সেদিন মায়ের ছুটি হবে। আমার চাকরির পর বৃদ্ধা মা সত্যিই একটু হাঁফ ছেড়েছিলেন। কিন্তু আজ মায়ের মুখের সামনে দাঁড়াতে পারছি না।’