কল্লোল মজুমদার, মালদা: গত দু’দিন ধরে মালদার (Malda) আকাশ মেঘে ঢাকা। কিন্তু এই মেঘে নেই পেঁজা তুলোর আরাম। এই মেঘই মৃৎশিল্পীদের কপালে জমাচ্ছে চিন্তার ভাঁজ। সূয্যিমামার দেখা না মেলায় বিপাকে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। মাঝে আর একটা দিন। তারপরই আসছেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। আর তার ক’দিন পরেই দুগ্গাবাহিনী মর্ত্যে এল বলে। তবে কি পুজোর স্টাইল স্টেটমেন্টে এবার তাঁদের ভরসা ট্রেন্ডি ছাতা বা রেইনকোট?
কোথাও প্রতিমার গায়ের মাটি শুকোচ্ছে না, কোথাও শুকাচ্ছে না রং। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার মালদা শহরের বেশকিছু মৃৎশিল্পীকে দেখা গেল, কেউ হাতে তুলে নিয়েছেন ব্লোয়ার। কেউ বা আগুন দিয়ে শুকোচ্ছেন মাটি, কেউ বা রং।
ফুলবাড়ি এলাকায় রাস্তার উপর সারি সারি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বিশ্বকর্মার প্রতিমা। মাটির কাজ প্রায় শেষ। কথা ছিল আজই রং শুরু করবেন মৃৎশিল্পী মান্তু দাস। কিন্তু গত দু’দিন ধরে বৃষ্টিতে মাটিই পুরোপুরি শুকোয়নি। তাই আগুন দিয়ে প্রতিমা শুকোচ্ছিলেন তিনি।
শহরের কয়েকটি বিগ বাজেটের পুজোর মধ্যে রয়েছে শরৎপল্লি সর্বজনীন মহিলা পরিচালিত দুর্গাপুজো। প্রতি বছরই নিত্য নতুন থিমে নজর কাড়ে এই ক্লাব। এবারের থিম স্বাধীনতা সংগ্রাম ও দেশরক্ষায় ভারতীয় নারী। সাবেকি প্রতিমা নির্মাণ করছেন সজল পণ্ডিত। পুজোমণ্ডপেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। এদিন সেখানে গিয়েও দেখা গেল একই ছবি। সজল পণ্ডিতের কয়েকজন সহকারী আগুন দিয়ে প্রতিমা শুকাতে ব্যস্ত।
আবার কিছুটা হলেও ভিন্ন চিত্র মৃৎশিল্পী অষ্টম চৌধুরীর কারখানায়। এখানে গিয়ে দেখা গেল, রংয়ের কাজও প্রায় শেষের মুখে। তবে যখন-তখন বৃষ্টির ভয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিমা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। প্রশ্ন করতেই অষ্টম চৌধুরীর উত্তর, ‘আমি আগে থেকেই বুঝতে পারছিলাম এবার বৃষ্টি ভোগাবে। তাই কাজ এগিয়ে রেখেছি। এখন সমস্যা একটাই, বৃষ্টিতে প্রতিমার ক্ষতি না হয়। রং শুকোতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’
মালদা জেলার অন্যতম শিল্পী বিবেক দাসের কথায়, ‘বৃষ্টিতে একটু সমস্যা হচ্ছে বৈকি। কোনওরকম কাজ চলছে। মাঝেমধ্যেই মোবাইলে আবহাওয়ার খবরে চোখ রেখে চলেছি, কখন বৃষ্টি নামবে। এতে শুধু আমাদের প্রতিমার কাজই থমকে রয়েছে তাই নয়, মণ্ডপ সাজাতেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টি না থামলে সমস্যায় পড়তে হবে।’
এখন সকলের একটাই প্রার্থনা, পুজোর (Durga Puja 2025) সময় বৃষ্টি যেন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় ফুটো না করে। বরং শরতের আকাশে তা ভেসে চলুক নির্বিঘ্নে।