মালদা: বয়স ৯ মাস। এখনও বসতে পর্যন্ত পারে না ছোট্ট অংশিকা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সে বিরল স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA Sort-1) রোগে আক্রান্ত। পরিবারের দাবি, দিল্লি এইমস থেকে এই রোগের চিকিৎসার জন্য ১.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। যা ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে ১৪ কোটির টাকার বেশি। আরলি অ্যাক্সেসে তা ৯ কোটি টাকায় পাওয়া যেতে পারে। এক সাধারণ সরকারি কর্মচারীর পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা কতটা কষ্টকর তা সকলেরই জানা। বাধ্য হয়ে ৯ মাসের মেয়েকে নিয়ে দরজায় দরজায় ঘুরছেন শিক্ষক বাবা। ইতিমধ্যে একরত্তির চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও।
সুন্দরবনের কুমিরমারি এলাকার বাসিন্দা অনিমেষ মণ্ডল। চাকরি সূত্রে বর্তমানে তিনি সামসির মতিগঞ্জে থাকেন। স্ত্রী বিটপি মণ্ডল গৃহবধূ। তাঁদের একমাত্র কন্যা সন্তান অংশিকা মণ্ডল। জন্ম থেকেই স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA Sort-1) নামক বিরল রোগে আক্রান্ত অংশিতা।
বিটপি জানান, “আমার ৯ মাসের মেয়ে এসএমএ টাইপ ওয়ান বিরল রোগে আক্রান্ত। মেয়ের বয়স যখন ১ মাস ২০ দিন ছিল তখন আমরা লক্ষ্য করি মেয়ে পা নাড়াচ্ছে না। ধীরে ধীরে হাত নড়ানোও বন্ধ হয়ে যায়। আমরা মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম। নানা পরীক্ষার পর জানা যায় মেয়ে এসএমএ টাইপ ওয়ান রোগে আক্রান্ত। সময়ে চিকিৎসা না হলে এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চাদের ২ বছরের বেশি বাঁচিয়ে রাখা যায় না। এই রোগের জন্য যে চিকিৎসা প্রয়োজন তা আমাদের এখানে হয় না। আমেরিকা থেকে আনাতে হয়। দিল্লি এইমস থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, এই ওষুধ আনতে ১.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু যেহেতু এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চারা ২ বছরের বেশি বাঁচে না, তাই আর্লি অ্যাক্সেসের মাধ্যমে এই ওষুধ ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৯ কোটি টাকায় আমরা পেতে পারি।”
তিনি আরও জানাচ্ছেন, এই ধরণের রোগের বাচ্চাদের মাসল না থাকার কারণে শক্ত খাবার খাওয়ানো যায় না। সেই কারণে মেয়েকে এখনও আমরা তরল খাবার খাওয়াচ্ছি। এই সময়ে বাচ্চারা হাঁটতে শুরু করে দেয়। কিন্তু মেয়ের এখনও ঘাড় শক্ত পর্যন্ত হয়নি। ও বসতেও পারে না।
অংশিকার বাবা জানান, “মেয়ের শরীরে জন্ম থেকে একটা জিন মিসিং আছে। ওর যে রোগ হয়েছে তাতে মাসলগুলো ক্রমশ ড্যামেজ হতে থাকে। এর একমাত্র চিকিৎসা জিন থেরাপি। ভারতবর্ষে এই চিকিৎসা হয় না। চিকিৎসার আমেরিকা থেকে একটা ইনজেকশন কিনে আনতে হবে। মেয়ের মাসল যাতে আরও ড্যামেজ না হয় তার জন্য মেয়েকে রিসডিপ্ল্যাম (RISDIPLAM) নামক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এই ওষুধ দেড় মাস পর পর দিতে হচ্ছে। প্রতিটি ওষুধের দাম ৬ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। এখনও পর্যন্ত মেয়েকে চারবার ওষুধ দেওয়া হয়েছে।”
অনিমেষ আরও জানান, “মেয়ের চিকিৎসার জন্য সবার দরজায় ঘুরছি। জেলাশাসক, বিধায়ক থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে দেখা করেছি। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর (CM Mamamta Banerjee) নম্বরে ফোন করেছি। সহকর্মীরা অনেক সাহায্য করছেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী সকলের দরজায় দরজায় গিয়ে মেয়ের প্রাণ ভিক্ষে করছি।”
গতকালই অংশিকার সাহায্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার (MP Sukanata Majumdar)। তিনি ওই ভিডিয়োতে জানান, “অংশিকা মণ্ডল এসএমএ টাইপ ওয়ান রোগে আক্রান্ত। জিন থেরাপির মাধ্যমেই এই রোগকে সারানো যায়। এই চিকিৎসার জন্য প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ হবে। এই টাকা ওই পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই জোগাড় করা সম্ভব নয়। ছোট্ট মেয়েটিকে বাঁচাতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এটা মনুষ্যত্বের লড়াই। আসুন আমরা সকলে মিলে ওই ছোট্ট শিশুর পাশে দাঁড়ায়।”