কল্লোল মজুমদার ও সৌম্যজ্যোতি মণ্ডল, মালদা: ইংরেজবাজারের লক্ষ্মীপুরে তৃণমূল কর্মী খুনে নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র। কেন খুনের খবর পেয়ে নিহতের বাবা ও পরিবারের লোকেদের সেখানে যেতে বাধা দিয়েছে পুলিশ সেই প্রশ্ন তুলেছেন সাবিত্রী। শুধু তাই নয়, মূল অভিযুক্ত মইনুলকে দলে ফেরানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। প্রকাশ্যেই এই ঘটনায় পুলিশ ও তাঁর দলের একাংশের বিরুদ্ধে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবিত্রী।
এদিকে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত সহ চারজনকে। ধৃতদের শনিবার আদালতে তুলে পাঁচদিনের হেপাজতে নিয়েছে পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের নেপথ্যে থাকা কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এক ত্রিকোণ প্রেমের গল্প।
ইংরেজবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, মানিকচকের তৃণমূল কর্মী আবদুল কালাম আজাদ খুন কাণ্ডে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত মইনুল শেখ ও তাঁর ভাই সাইদুল শেখকে। এছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে মইনুল শেখের ঘনিষ্ঠ ইমারত শেখ ও তাঁর ভাই সাহিদ শেখকে। ধৃত চারজনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্মীপুর গ্রামে একটি জন্মদিনের পার্টিতে নৃশংসভাবে খুন হন মানিকচকের বাসিন্দা আবদুল কালাম আজাদ। অভিযোগ উঠে আসে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মইনুল শেখের দিকে। এরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তের প্রথম দিকে উঠে এসেছিল খুনের পিছনে রয়েছে জমি কেনাবেচার বিবাদ। কিন্তু তদন্ত যত এগোতে থাকে ততই পালটে যায় খুনের মোটিভ।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রীর সঙ্গে অভিযুক্ত গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের নাবালক ছেলের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। খুনের অন্যতম কারণ সেই সম্পর্ক। তাছাড়া জমির ব্যবসা নিয়ে বিবাদও ছিল। তদন্তকারীদের আরও অনুমান, জমি নিয়ে দুজনের মধ্যে বিবাদ চলছিল বেশ কয়েক মাস ধরে। এরই মধ্যে সেই ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ্যে চলে আসায় দুই তৃণমূল নেতা-কর্মীর মধ্যে বিবাদ বাড়তে থাকে।
এদিন লক্ষ্মীপুরে গিয়ে দেখা গেল এলাকা থমথমে। ওখানে একটি চায়ের দোকানে ভিড় জমিয়েছিলেন কয়েকজন মানুষ। যদিও তাঁরা খুন প্রসঙ্গে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন। এক বাসিন্দা জানান, আবদুল কালাম আজাদের যে দুটো বিয়ে তাঁরা কেউই জানতেন না। তবে মানিকচক থেকে এখানে এসে ব্যবসা করার সুবাদে অনেকেই আজাদকে চিনতেন। আরেক ব্যক্তি জানান, অনুষ্ঠান বাড়ির একটি টিনের ঘরে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করা হয়েছে আজাদকে। আক্রমণ করা হয় তাঁর স্ত্রীকেও। প্রত্যক্ষদর্শীরা এদিন দাবি করেন, অনুষ্ঠান বাড়িতে সস্ত্রীক আজাদ সহ তাঁর অনুগামীরা ঢুকতেই পিছু নেন অভিযুক্তরা। তারপর আর কিছু বোঝা যায়নি। অনুষ্ঠান বাড়িতে উচ্চগ্রামে ডিজে বাজছিল। সম্ভবত সেই আওয়াজে আজাদের আর্তনাদ ঢাকা পড়ে যায়। ওই ঘর থেকে কোনওরকমে মহিলা বাইরে বেরিয়ে এসে বিষয়টি জানান। ততক্ষণে অবশ্য পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। তবে শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে।
এদিন সন্ধ্যায় নিহত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে দেখা করতে যান সাবিত্রী। তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে আমি পুলিশ সুপারকে বলব, যখন খুনের ঘটনা ঘটছিল আজাদের পরিবারের লোকের কাছে খবর আসে। তাঁর বাবা-ভাইরা যাচ্ছিলেন। কিন্তু অমৃতিতে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। কেন আটকানো হয়েছিল? তবে পুলিশ সুপারের উপর ভরসা আছে। ভালো কাজ করছেন। কয়েকজন এখনও অধরা। তারা পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। আর অভিযুক্ত মইনুল শেখ জমি মাফিয়া, দুষ্কৃতী। আমি দল থেকে বার করে দিয়েছিলাম। জানি না একে কে পরবর্তীতে দলে এনেছে। আমি দলকেও জানিয়েছি। এর ন্যায্য বিচার এবং তাড়াতাড়ি বিচার চাই।’