সৌরভকুমার মিশ্র, হরিশ্চন্দ্রপুর: বরকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বিয়েবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রথা ভীষণ জনপ্রিয়। ব্যান্ডপার্টির বাজনায় আর বরযাত্রীর হই-হুল্লোড়ের সহযোগে সেই সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ির যাত্রা আরও আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। এমনই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সংসার চলত মালদার (Malda) তুলসীহাটা ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রাজ্জাকের। কিন্তু, রবিবার সন্ধ্যায় হরিশ্চন্দ্রপুরের জনমদল এলাকায় ঘটে গেল একটি দুর্ঘটনা। বিয়েবাড়ির বর আনতে গিয়ে মাঝ রাস্তায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে যায় রাজ্জাকের ঘোড়ার গাড়ি। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় রাজ্জাকের পাইবোল্ড প্রজাতির ঘোড়াটি। আহত হয়েছেন রাজ্জাকের দুই ছেলে মোহাম্মদ আসলাম এবং মোহাম্মদ রিজু আলি। ঘোড়ার মৃত্যুর পর শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে রাজ্জাকের পরিবার। কীভাবে সংসার চলবে সেটাই এখন চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাজ্জাকের পরিবার এই কাজে বহু যুগ ধরে যুক্ত। তাঁর পূর্বসূরিরাও বংশপরম্পরায় ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন। এককালে সেই ঘোড়ার গাড়িই যাতায়াতের কাজে ব্যবহৃত হত। এলাকার মানুষ যাতায়াতের কাজে ঘোড়ার গাড়িই প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিতেন। তারপর কালক্রমে এলাকা থেকে আস্তে আস্তে ঘোড়ার গাড়িতে যাত্রী পরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়।
সংসার টানতে একসময় রাজ্জাক এবং তাঁর ছেলেরা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে পাড়ি দেন। তাঁরা সেই কাজ করতেন দীর্ঘদিন। এরপর একদিন পূর্বসূরিদের দেখানো পুরোনো পথেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্জাক। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে ঘোড়ার গাড়ি টেনে সংসার চালাতে শুরু করেন তিনি।
এরপর অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে গাড়িতে নকশা করে সাজানো হয়। সেই গাড়িই বিয়েবাড়িতে ভাড়া দিয়ে আয় হত। তবে, ঘোড়ার মৃত্যুতে এখন চিন্তার ভাঁজ রাজ্জাকের কপালে। সংসার চালাতে আবার হয়তো ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে হবে ছেলেদের নিয়ে!
রাজ্জাক বললেন, ‘আড়াই লাখ টাকা দিয়ে রাজস্থান থেকে দুটো ঘোড়া কিনেছিলাম। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতাম। রথ বানাতেও ভালো খরচ হয়েছিল। ঘোড়ার অকালমৃত্যু আমাদের পথে বসিয়ে দিল।’ স্থানীয় বাসিন্দা হরিশ্চন্দ্রপুর-১ (Harishchandrapur) নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা মোকারম আলি বলেন, ‘রাজ্জাকের পরিবার খুবই গরিব। তাঁদের ঘোড়ায় টানা গাড়ি ভাড়া দিয়েই সংসার চলে। আমি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দেখব, যাতে এই পরিবারটিকে কিছু সাহায্য করা যায়।’
কুশিদা বিদ্যুৎ দপ্তর স্টেশন ম্যানেজার অমিতকুমার সাহা বলেন, ‘ওই ঘোড়ার গাড়িটি পুরোটাই অ্যালুমিনিয়াম বডির। অ্যালুমিনিয়াম ধাতু বিদ্যুৎ পরিবহণের ভালো ক্ষমতা রাখে। আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, ওই এলাকায় রাস্তায় কোনও তার ছিঁড়ে পড়ে নেই। তবে গাড়িটির উচ্চতা এতটাই ছিল যে রাস্তার অনেক ওপরে থাকা একটি লাইনের সংস্পর্শে চলে আসে। এর ফলেই গাড়ি সহ ঘোড়াটি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়। যার ফলে ঘোড়াটি মারা গিয়েছে।’