মালদা ব্যুরো: মুখ্যমন্ত্রীর টুইটের পরেও রবিবার রাতে পরিবার সমেত মালদার (Malda) চাঁচলের (Chanchal) পরিযায়ী শ্রমিককে (Migrant Employee) আটকে রাখল দিল্লির গীতা কলোনি থানার পুলিশ। মালদা জেলা প্রশাসন দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, নথিপত্র যাচাইয়ের পর ছেড়ে দেওয়া হবে। যদিও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাড়া হয়নি ওই পরিবারকে।
চাঁচলের মুক্তার খানের স্ত্রী সাজেনুর পারভিন এবং এক সন্তানকে শনিবার কয়েকজন ‘পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরই দিল্লি পুলিশ আটক করে তাঁদের। রবিবার রাতে চাঁচলে মুক্তারদের পরিবারের তরফে ওই ‘পুলিশ’দের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সোমবার ব্লক প্রশাসনের তরফে ওই শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। পাশাপাশি মুক্তির পর ওই পরিবার ফিরে এলে প্রশাসন সমগ্রভাবে পাশে থাকবে বলে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। সোমবার পান্ডুয়া শরিফের ছোট দরগায় যুগ্ম মতুয়ালি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। সেখানে বাংলাভাষীদের ওপর অত্যাচার ভবিষ্যতেও চলতে থাকলে বড় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘কয়েকদিন আগে দিল্লির জয় হিন্দ কলোনিতে গিয়েছিলাম। সেখানকার বাসিন্দাদের মুখে শুনেছি কীভাবে তাঁদের ওপর অত্যাচার চলছে। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সহ যাবতীয় কাগজপত্র দেখানো সত্ত্বেও নির্যাতন চলছে।’
প্রশ্ন উঠেছে, ওই পুলিশরা কারা? তবে কি ‘বাঙালি ধরার’ গাড়ির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই এলাকায়? মুক্তার খাতুনের বোন মুক্তারি খাতুন বললেন, ‘কয়েকবার ফোনে কথা হলেও দুপুর থেকে আর ফোনে পাচ্ছি না। খুব দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।’
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করে দেওয়া আমির শেখের পরিবারের সঙ্গে সোমবার দেখা করলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পিরজাদা কাসেম সিদ্দিকী। আমিরের পরিবারকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আর দু’একদিনের মধ্যেই আমিরকে আমরা বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।’
এদিনও আক্রমণাত্মক মুডে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী। বিজেপিকে তোপ দেগে তাঁর বক্তব্য, ‘বিজেপির সরকার পুলিশ গুন্ডা দিয়ে আমাদের শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘শুধু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষা করছি। তারপর কত ধানে কত চাল, সেটা দেখিয়ে দেব।’ কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরী অবশ্য তৃণমূলকে এই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করার জন্য বিঁধেছেন।
পরিযায়ী শ্রমিক এবং বাংলাভাষীদের ওপর অত্যাচারের ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। চুপ নেই পদ্ম শিবিরও। বিজেপির উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু বললেন, ‘প্রচুর রোহিঙ্গার জাল আধার কার্ড, ভোটার কার্ড করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। মূল সমস্যা সেখানে। এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর শ্রমিকদের কথা মনে পড়ল না। ভোটের আগে এখন বলছেন, রাজ্যে এলে কাজ করে দেবে।’
তথ্য সহায়তা : সৌম্যজ্যোতি মণ্ডল, সেনাউল হক ও গৌতম দাস