সুশান্ত ঘোষ, মালবাজার: মঙ্গলবার রাতে মত্ত গৃহবধূর হাত থেকে তাঁর শিশুসন্তানকে উদ্ধার করলেন প্রতিবেশীরা। মাল শহরের (Malbazar) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কলোনির বাসিন্দারা রাত বারোটা নাগাদ পাড়ারই এক গৃহবধূকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অশ্লীল গালিগালাজ করতে শোনেন। ওই গৃহবধূর চিৎকার এবং তাঁর শিশুসন্তানের আর্ত কান্নায় এলাকার সকলের ঘুম ভেঙে যায়। সবাই ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেন অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ওই মহিলা নিজের সন্তানকে অমানুষিক মারধর করছেন। সকলে মিলে ওই মহিলার হাত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। তবে, লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। মাল থানার আইসি সৌম্যজিৎ মল্লিক বলেন, ‘ওই মহিলার স্বামীকে ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ওই মহিলা এখন সুস্থ আছেন।’
মাল শহরের দক্ষিণ কলোনির একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন বছর ত্রিশের ওই মহিলা ও তাঁর এক বছরের সন্তান। কর্মসূত্রে তাঁর স্বামী মাদারিহাটের একটি চা বাগানের কর্মী। ছুটির দিনে মাঝেমধ্যে তিনি বাড়ি ফিরতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত বারোটা নাগাদ টোটোয় চেপে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই মহিলা বাড়িতে ফেরেন। কিছুক্ষণ পর থেকেই অশ্লীল গালিগালাজ ও চিৎকার করতে থাকেন। যে বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকেন সেই বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, চিৎকার করতে করতে নিজের এক বছরের সন্তানকে নির্মমভাবে মারছিলেন ওই মহিলা। একসময় শিশুটিকে বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে দেন। এদিকে, প্রতিবেশীরা চিৎকার ও মারধরের আওয়াজে ওই বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে যান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাঁরাই মালবাজার থানায় ফোন করেন। দ্রুত থানার মহিলা পুলিশ এলাকায় পৌঁছান।
ততক্ষণে ওই মহিলা লোকজন দেখে কিছুটা শান্ত হন। মার খেয়ে ক্লান্ত শিশুটিও ঘুমিয়ে পড়ে। স্থানীয়রাই ঘুমন্ত শিশুটিকে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে আগলে রাখেন। পরিস্থিতি দেখে মাল থানার তরফে সারারাত সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয় ওই বাড়ির সামনে। মহিলার স্বামীকে ফোন জানানো হলেও গভীর রাতে তিনি আসতে পারেননি। অত রাতে মহিলা টোটোয় চেপে কোথা থেকে ফিরছিলেন তাও জানা যায়নি।
ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসী বলছেন, পারিবারিক রাগ-অভিমান থাকতেই পারে। কিন্তু এক বছরের বাচ্চার গায়ে হাত তোলা বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। স্থানীয় টুটুল সরকার বলেন, ‘এত বছর ধরে আমরা এই এলাকায় আছি। পারিবারিক বিরোধ অনেক দেখেছি। কিন্তু নিজের এক বছরের সন্তানকে মেরে ছুড়ে ফেলার মতো এই প্রথম দেখলাম। ঘটনায় আমরা হতবাক।’
সকালেও ওই মহিলার ঘোর না কাটায় বাচ্চাটিকে প্রতিবেশীরাই আগলে রেখেছেন। ওই মহিলার পাশে এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন ছিলেন। সকালে তাঁর স্বামী বাড়িতে এসে পৌঁছালে, এলাকাবাসীর কাছে এমন ঘটনার জন্য ক্ষমা চান।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মণিকা সাহা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সমরকুমার দাস এলাকায় পৌঁছান। সমর বলেন ‘আমরা বারবার বাড়িওয়ালাদের বলেছি, বাড়িতে ভাড়া সংক্রান্ত বিষয় থানা এবং পুরসভাকে জানাতে। এই ঘটনার পর সচেতনতা বাড়াতে আরও উদ্যোগ নেব।’