জলপাইগুড়ি ব্যুরো: শনিবার রাতে মালবাজারে (Malbazar) ডাম্পারের বেপরোয়া চলাচলের বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভ এতটুকু কমেনি। গোটা ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক এবং মাল পুরসভার ভূমিকা নিয়েও চরম অসন্তোষ রয়েেছ শহরে। ডাম্পার চলাচল নিয়ে সমস্যা মেটাতে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেও তা বাতিল করে দেওয়ায় শাসকদলের নেতারা এখন জনতার কাঠগড়ায়।
মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনও সর্বদলীয় বৈঠক বা গণকনভেনশন ডেকে মালবাজারের সাধারণ মানুষের বক্তব্য শোনা হয়নি। অথচ গত সোমবার দুপুরে মাল পুরসভায় এসে চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি এবং অন্য তৃণমূল কাউন্সিলারদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মন্ত্রী। তারপরই তৃণমূলের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক বাতিল করা হয়। সোমবার বিকেলে ডাম্পার মালিকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের যে বৈঠক হয় তার আগে হাজির ছিলেন মন্ত্রী। ডাম্পার মালিকদের সঙ্গে তাঁর একান্তে কথাও হয়। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানালেও বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই বেরিয়ে যান।
এদিকে, মালের পুর চেয়ারম্যান সোমবারই জানিয়েছিলেন, দলীয় নেতৃত্বের অনুমোদন না পাওয়ায় সর্বদলীয় বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রী নিজেই দেখছেন। মাল শহরে প্রশ্ন উঠেছে, অবৈধ ডাম্পার মালিকদের আড়াল না করে সমস্যা সমাধানে শাসকদল কতটা আগ্রহী? মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু পোস্টও হয়েছে। একইভাবে পুর চেয়ারম্যান কেন শহরবাসীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই ইস্যুতে শাসকদলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিজেপির মাল বিধানসভার আহ্বায়ক রাকেশ নন্দী বলেন, ‘আমরা একটি সর্বদলীয় বৈঠক দাবি করেছিলাম। কার স্বার্থে সেই বৈঠক বাতিল করা হল, জানতে চাই।’ সিপিএমের মাল এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, নিরপরাধ কিছু ছেলেকে হাজতে থাকতে হচ্ছে। এই ঘটনায় চেয়ারম্যান ও মন্ত্রীর ভূমিকায় আমরা হতাশ।’
মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক অবশ্য এদিন বলেন, ‘প্রশাসন তার নিজের কাজ করছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা সমাধানের।’ একই সুরে চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি বলেন, ‘আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করছি বিষয়টি মীমাংসা করার।’
মালবাজারের আমজনতার সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ পুলিশের ভূমিকায়। বিশেষ করে ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে ধারা দিয়েছে, তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষিপ্ত শহরের মানুষ। শনিবার রাতে সাংবাদিক ও আমজনতার ওপর হামলাকারী ডাম্পারচালকদের একাংশ রীতিমতো খুনের হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ওই ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন সশস্ত্র দুষ্কৃতী সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের শাসায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে স্রেফ দর্শকের ভূমিকার ছিল বলে অভিযোগ। পরে জনতার ক্ষোভের বহর দেখে মন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মহম্মদ রাসেল সরকার সহ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জনতার অভিযোগ, ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবেই জামিনযোগ্য ধারা দিয়েছিল। ফলে পরদিনই অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে যায় আদালতে। অন্যদিকে নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ডাম্পার মালিকরা সোমবার পুলিশের কাছে যে অভিযোগ জানিয়েছিল তাতে সুিনর্দিষ্টভাবে দীপ দেবনাথের নাম ছিল। অথচ পুলিশ পঁাচজনকে গ্রেপ্তার করে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে। ফলে ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেপাজত হয়।
পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে হামলাকারী ডাম্পারচালকদের পুলিশ কেন চিহ্নিত করে জামিন অযোগ্য ধারা দিল না?