মালবাজার: শনিবার সন্ধ্যায় মালবাজার শহরে (Malbazar) ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে হঠাৎই অগুনতি বালিবোঝাই ডাম্পার নেমে পড়ায় সমস্যার শুরু। যাতায়াতে বাসিন্দাদের সমস্যা হলে তাঁরা কয়েক জায়গায় প্রতিবাদ জানিয়ে ডাম্পারগুলিকে আটকে দেন। সমস্যা তখন আরও বড় চেহারা নেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও বাসিন্দাদের প্রতিবাদের মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ডাম্পারগুলির একটি অংশ অন্য রাস্তা দিয়ে সরে পড়লেও এক কুখ্যাত বালি মাফিয়ার নেতৃত্বে হঠাৎ তাণ্ডব শুরু হয়। খবর সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের রীতিমতো মারধর করা হয়। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষের মুখে আঘাত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পত্রিকার আরেক প্রতিনিধি অভিষেক ঘোষকে বালি মাফিয়ারা ব্যাপকভাবে হুমকি দেয়। সেই সময় পুলিশকে কাছেপিঠে দেখা যায়নি। যোগাযোগ করা হলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিতে চায়নি। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কী কারণে এই সমস্যা হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সেতু সংস্কারের কারণে বর্তমানে গজলডোবা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে এসে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ডাম্পার চলাচলের বিষয়ে ক্ষোভ জানালে ক্রান্তির গ্রামীণ রাস্তা দিয়েও বালিবোঝাই ডাম্পার চলাচল বন্ধ। এ কারণেই এদিন সন্ধ্যায় শয়ে-শয়ে বালিবোঝাই ডাম্পার মালবাজার শহরের রাস্তায় নেমে পড়ে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে হঠাৎ করে এভাবে রাস্তায় ডাম্পার নামলে সাধারণের যাতায়াতে সমস্যা হওয়ার কথা। তাই সাধারণ বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানিয়ে ডাম্পারগুলিকে আটকে দেন। একটা সময়ে গোটা মাল বাজার চত্বরজুড়ে কয়েকশো ডাম্পারের লাইন পড়ে যায়। পরিস্থিতির গুরুত্ব আঁচ করে ওই ডাম্পারগুলির একাংশ অন্য রাস্তা দিয়ে সরে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা কৌশিক ঘোষ, লাল্টু দত্তরা জানালেন, ছোট রাস্তায় ডাম্পার চলাচলে এমনিতেই সমস্যা হয়। রোজই এই সমস্যা হলেও এদিন সমস্যার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। লাল্টুর বক্তব্য, ‘এমন সমস্যা মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবাদ জানাতেই বাসিন্দারা ডাম্পারগুলিকে আটকে দেন। রাজনৈতিক রং ভুলে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের জেরে পরিস্থিতি প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ সেই সময় এলাকায় গেলেও জনতার প্রতিবাদের মুখে পড়ে তারা পিছু হটে। এই সময় এক সাংবাদিকের ওপর বালি মাফিয়ারা আক্রমণ চালায়। এলাকার বাকি সাংবাদিকরা সেই সময় সেখানে গেলে বালি মাফিয়ারা সবার ওপরই চড়াও হয়। সেই সময়ই উত্তরবঙ্গ সংবাদের সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়।
কী কারণে প্রায় শ-তিনেক ডাম্পার ঠিক সন্ধ্যায় শহরের রাস্তায় জাতীয় সড়কে নেমেছিল তা পরিষ্কার নয়। বালি মাফিয়ারা তাণ্ডব শুরু করলেও পুলিশ কী কারণে স্রেফ দর্শক হয়ে থাকল তা পরিষ্কার নয়। সাংবাদিক নিগ্রহের সময়ও পুলিশকে আগ বাড়িয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। মাল থানার আইসি সৌম্যজিৎ মল্লিক বললেন, ‘কী কারণে এদিন এত ডাম্পার শহরের রাস্তায় নেমেছিল তা পরিষ্কার নয়। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’