অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: ময়নাগুড়ির (Mainaguri) খাগড়াবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গড়ে ওঠা সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর জেরে সংলগ্ন একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুর উপস্থিতি কমছে বলে অভিযোগ। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প লাগোয়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী পিংকি রায় বলেন, ‘দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য অভিভাবকরা বাচ্চাদের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠাতে চাইছেন না। দুর্গন্ধের জন্য কেন্দ্রে থাকতে আমাদেরও সমস্যা হয়।’ অবিলম্বে সমস্যার সমাধান না হলে স্থানীয় বাসিন্দারা আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী প্রদীপকুমার মজুমদার, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দুই রাষ্ট্রমন্ত্রী বেচারাম মান্না, শিউলি সাহা এবং দপ্তরের সচিব পি উলগানাথন সহ অন্যরা ওই প্রকল্প পরিদর্শনে যান। এলাকাবাসী মন্ত্রীর কাছে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী আসার আগেই স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তাঁদের হুমকি দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে পঞ্চায়েত প্রধানের হুমকি দেওয়ার একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে (যদিও উত্তরবঙ্গ সংবাদ ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি)।
খাগড়াবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বাবলু রায় বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছি। হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রকল্পটি ভালোভাবে চলার কারণে বিরোধীরা বাসিন্দাদের ভুল বুঝিয়ে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছেন।’ তাঁর সংযোজন, ‘আগামীতে এই প্রকল্প আরও বৃহত্তরভাবে করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
২০১৯ সালে খাগড়াবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে এই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পটি চালু হয়েছিল৷ প্রথমদিকে শুধু ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে সংগৃহীত আবর্জনা দিয়ে কাজ চালানো হত। কিন্তু গ্রামীণ এলাকা থেকে প্রকল্প চালানোর মতো পর্যাপ্ত আবর্জনা পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে, ময়নাগুড়ি পুরসভা গঠন হওয়ার পর তাদের নিজস্ব ডাম্পিং গ্রাউন্ড ছিল না। ২০২৩ সালে খাগড়াবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করে পুর এলাকার যাবতীয় আবর্জনা ময়নাগুড়ি পুরসভা ওই প্রকল্পে পাঠাতে শুরু করে৷ সমস্যার সূত্রপাত সেখান থেকে৷ বসাকপাড়ার বাসিন্দা প্রতিমা মণ্ডলের বক্তব্য, ‘প্রকল্প চালু করে এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে আবর্জনা নিয়ে আসা হচ্ছে। দুর্গন্ধে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। সমস্যা মেটাতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’
আবর্জনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখান থেকে সংলগ্ন বসাকপাড়া ও মোদকপাড়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠেন। লাগাতার দূষণ ও দুর্গন্ধের জেরে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আরেক বাসিন্দা শম্পা মোদক বলেন, ‘সমস্যার কথা জানাতে গেলে হুমকির মুখে পড়তে হয়।’ একই বক্তব্য মোদকপাড়ার বাসিন্দা পূজা দাস ও জ্যোতিকণা দাসের। দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবিতে তাঁরা সরব হয়েছেন।