সিদ্ধার্থশংকর সরকার, পুরাতন মালদা: দফা এক, লক্ষ্য এক। মুচলেকা আদায়ের অভিযান। নাবালিকা বিয়ে বন্ধে মুচলেকা দেবেন অভিভাবকরা। মালদা জেলায় ৫৭০০ গৃহকর্তা এবং অঙ্গনওয়াড়ি, আশাকর্মী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা মিলিয়ে প্রায় ৬০০০ জনকে এই অভিযানের আওতায় আনা হয়েছে। গোড়ায় গলদ থাকায় মুচলেকা দিতে হবে অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মী এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের।
গলদটা কী? সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করলেও বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতার ঘাটতি আছে এঁদের মধ্যেও। এজন্যই মালদা জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক শিবেন্দুশেখর জানা জানালেন, এই কর্মীরা প্রথমে নিজেদের পরিবারে ১৮ বছরের আগে মেয়েদের ও ২১ বছরের নীচে ছেলেদের বিয়ে না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এরপর তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করবেন।
মালদা জেলার ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এই অভিযানের আওতায়। বাল্যবিবাহ ঠেকাতে এই নজিরবিহীন মুচলেকা অভিযান। সচেতনতা প্রচারে প্রশাসনের উদ্যোগ সত্ত্বেও কম বয়সে বিয়ের পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক বলেই এই বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। গত এক বছরের ওই পরিসংখ্যানে ২৮২টি বাল্যবিবাহের খবর আছে। তার মধ্যে বিয়ে ঠেকানো গিয়েছে ২৪৩ জনের। ৩৯ জনের বিয়ে আটকানো সম্ভব হয়নি। কম বয়সে বিয়ের জন্য বিভিন্ন থানায় ৩৭টি এফআইআর দায়ের করেছিল প্রশাসন।
প্রশাসন ও শিশু সুরক্ষা দপ্তর যৌথভাবে মালদা জেলাকে বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে এই মুচলেকা অভিযানের পরিকল্পনা করেছে, যা সারা দেশের কাছে অনুসরণীয় মডেল হয়ে উঠতে চলেছে বলে শিশু সুরক্ষা দপ্তরের দাবি। অভিযানে যে প্রায় ৬০০০ অঙ্গনওয়াড়ি, আশাকর্মী এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের নামানো হচ্ছে, তাঁরা এক ধরনের অঙ্গীকারপত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাবেন।
ওই মুচলেকাপত্রে সুস্পষ্টভাবে লেখা থাকবে, ১৮ বছরের নীচে মেয়েদের এবং ২১ বছরের নীচে ছেলেদের বিয়ে তাঁরা দেবেন না। প্রশাসনের দাবি, শুধু বাল্যবিবাহ ঠেকানো নয়, শিশু পাচার, স্কুলছুট এবং শিশুশ্রমমুক্ত মালদা গড়ে তোলা এই অভিযানের উদ্দেশ্য। জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক বলেন, ‘বাল্যবিবাহ রোধে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রতিটি ব্লকে আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের কাছে প্রথমে মুচলেকা চাওয়া হচ্ছে।’
মালদা জেলার ১৫টি ব্লককে বাল্যবিবাহপ্রবণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ব্লকগুলিকেই মুচলেকা আদায়ের কর্মসূচিতে রাখা হয়েছে। বেশকিছু ব্লকের রিপোর্ট ইতিমধ্যে জমা পড়েছে, যা এই অভিযানের প্রাথমিক সাফল্য সূচিত করছে। পুরাতন মালদার মুচিয়া এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক নেত্রী মমতা চক্রবর্তী বলেন, ‘বাল্যবিবাহ রোধে জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ খুব ভালো। আমরা বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি।’