কলকাতা: নানাবিধ ক্যানসারের হরেকরকম্বা ওষুধ বেরিয়ে গেলেও রোগটা হয়েছে শুনলে এখনও মুখ শুকিয়ে যায় মানুষের। প্রতিদিন নতুন নতুন ইতিবাচক গবেষণার সন্ধান মিললেও প্রাণের ভয় কাটে না। এমতাবস্থায় বিশেষ ধরনের ক্যানসার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার দিশা দেখালেন কলকাতার বিজ্ঞানীরা।
কলকাতার একদল বিজ্ঞানী এমন পাঁচটি প্রোটিন চিহ্নিত করেছেন, যেগুলি রক্তে উপস্থিত থাকলে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার আগেভাগে ধরা পড়তে পারে। এই আবিষ্কার একদিকে যেমন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের দরজা খুলতে পারে, তেমনই ভবিষ্যতে খুলে যেতে পারে নতুন ওষুধ তৈরির রাস্তাও।এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন কলকাতার মোহনা ও উপকূলীয় গবেষণা ফাউন্ডেশনের জিন বিশেষজ্ঞ নীলাব্জ সিকদার। এই গবেষণায় তাঁকে সাহায্য করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ইজরায়েল এবং আমেরিকার কিছু গবেষণা সংস্থাও।
সিকদারের কথায়, ‘আমরা দেখেছি, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি বা কম হয়। এই প্রোটিনগুলিকে ‘বায়োমার্কার’ বা ‘স্বাক্ষর উপাদান’ হিসাবে ব্যবহার করে ভবিষ্যতে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার দ্রুত চিহ্নিত করা যেতে পারে।’
ভারতে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার বেশ বিরল ধরনের রোগ। পুরুষদের মধ্যে এর স্থান ২১তম এবং মহিলাদের ধরলে ১৭তম। তবে এই ক্যানসার অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং বিপজ্জনক। টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের এক সমীক্ষা বলছে, ভারতে প্রতি ১০ জন আক্রান্তের মধ্যে অন্তত ৮ জনের ক্ষেত্রেই রোগ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে।
কলকাতার গবেষকরা এই গবেষণার জন্য প্রায় ২,০০০ জন ক্যানসার রোগীর জিনতাত্ত্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। ওই তথ্য দুটি আন্তর্জাতিক ক্যানসার জিনোম ডেটাবেস থেকে সংগৃহীত। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করে খুঁজে বের করা হয়েছে, কোন কোন প্রোটিনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে বা কমে গিয়েছে।
কলকাতার বিজ্ঞানীরা মোট সাতটি প্রোটিনের হদিস পেয়েছেন, যেগুলির ‘জনক জিন’ (পেরেন্ট জিনস) অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয়। আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, এই সাতটি প্রোটিনের সঙ্গে স্তন, বৃহদন্ত্র, যকৃৎ, ওভারি বা প্রস্টেট ক্যানসারের সম্পর্ক রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রোটিন আগেই অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত বলে চিহ্নিত হয়েছিল। কলকাতার গবেষকরা বলছেন, বাকি পাঁচটিও এই ক্যানসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
তবে এই গবেষণা এখনও বাস্তবে রোগীদের ওপর পরীক্ষিত হয়নি। ডিজিটাল ডেটা বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে এই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। পরবর্তী ধাপে গবেষকরা ক্যানসার আক্রান্তদের রক্তে এই প্রোটিনগুলির মাত্রা কীভাবে বদলাচ্ছে—তা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হবেন। গবেষণাপত্রটি ‘কম্পিউটর্স ইন বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।