বরুণকুমার মজুমদার, করণদিঘি: সাজ্জাক আলমের মৃত্যুতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে করণদিঘির (Karandighi) ছোট সোহার গ্রাম। ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে থাকা ছোট্ট এই গ্রামের বাসিন্দারা একসুরে বলছেন, ওই পরিবারের জন্য গ্রামে শান্তি ছিল না। সাজ্জাকের প্রয়াত দাদা বদরুলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী শাহজাদি বেগমও এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘সাজ্জাকের মৃত্যুর খবর গ্রামের মানুষের কাছে শুনেছি। যেমন কর্ম করে জেলে গিয়েছিল তেমনভাবেই ওর মৃত্যু হল। ওর মৃত্যুতে আমার কোনও শোক নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পরে বিড়ি বেঁধে দুই ছেলে-এক মেয়েকে নিয়ে কোনওক্রমে সংসার চালাই। ওদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখি না।’
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা হাজি আকতার আবিদ সাজ্জাকের প্রতিবেশী। তিনি বলেন, ‘আবদুল মজিদের চার ছেলে আকতার, মুরতাজ, বদরুল ও সাজ্জাক। তাদের মধ্যে বদরুল আগেই মারা গিয়েছে। সাজ্জাকের মৃত্যু হয়েছে এনকাউন্টারে। মেয়ে মর্জিনা ও ছোট মেয়ে তিতলি। ছোট জামাই তোফাজুল নাদিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। তারপর গ্রামের বাসিন্দারা আব্দুল মজিদকে গ্রামে ফিরতে দিতে চায়নি। কাকুতিমিনতি করে মজিদ গ্রামে ফিরে আসে। আজকে সকালে জানতে পারি সাজ্জাককে পুলিশ এনকাউন্টার করে মেরেছে। ওর দেহ গ্রামে ফিরবে কি না জানা নেই। এটুকু বলব, সাজ্জাকের এনকাউন্টারে করণদিঘির বাসিন্দারা স্বস্তিতে বসবাস করতে পারবে।’ একই মত পোষণ করেন প্রতিবেশী প্রদীপ তাঁতি। ছোট সোহারের আরেক বাসিন্দা শেখ জালি বলেন, ‘সাজ্জাকের মৃত্যুতে গ্রামে কোনও প্রভাব পড়েনি, কারণ ওদের কার্যকলাপে গ্রামবাসীরা বিরক্ত।
সাজ্জাকের বোন মর্জিনার গ্রাম বড় সোহারে। তার বাড়ির সামনেই রয়েছে পুলিশ মোতায়েন। মর্জিনার পাশেই ছোট বোনজামাই তোফাজুল নাদিমের বাড়ি। বর্তমানে সে জেলে। বাড়িতে নেই মার্জিনা ও ছোট বোন তিতলি। মর্জিনার খোঁজে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা পুলিশের কর্তারা।
করণদিঘি ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক রানা রায় বলেন, ‘২০১৯ সালে নবমীর রাতে খুন করেছিল করণদিঘির মুরগি ব্যবসায়ী সুবেশ দাসকে। তদন্তে নেমে খুনের পান্ডা সাজ্জাক আলমকে গ্রেপ্তার করেছিল করণদিঘি থানার পুলিশ। আদালতে বিচার চলছিল। সাজ্জাক সুবেশকে গুলি করে খুন করেছিল। পুলিশও গুলি করে তাকে মেরেছে। সুবেশের পরিবার ও করণদিঘির সাধারণ মানুষ এবার স্বস্তিতে বসবাস করবে।’
ঘটনায় দোষী বাকিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান করণদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ধীমান বর্মন। মৃত সুবেশ দাসের মামা মোহিনীমোহন দাস বলেন, ‘সাজ্জাকের মৃত্যুতে সুবেশের আত্মা শান্তি কিছুটা পেল। বাকিদের ফাঁসি চাই।’
শনিবার সুবেশের বাড়িতে পৌঁছে দেখা যায় বাড়ির গেটে দুই পুলিশকর্মী মোতায়েন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভিতরে ঢোকার অনুমতি মেলে। ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সুবেশের স্ত্রী ভানু দাস। সাজ্জাকের মৃত্যুর খবর পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘স্বামীর খুনির মৃত্যু গুলিতেই হল, আমি খুশি। বাকিদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি বিচারকের কাছে।’ সুবেশের বছর দশেকের ছেলে রাজদীপ। মায়ের মতো সেও বাবার খুনিদের ফাঁসি চাইছে।