করণদিঘি: চালকলের আড়ালে ভেজাল ও নকল বিলিতি মদের কারবারের অভিযোগে উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘি থানার টুঙ্গিদিঘিতে বড়সড়ো অভিযান চালাল আবগারি দপ্তর। শুক্রবার ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত চলা তল্লাশিতে বিপুল পরিমাণে নকল মদ, সিল, বারকোড ও স্পিরিট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘটনায় দুটি রাইস মিল সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আবগারি দপ্তর।
আবগারি দপ্তর সূত্রে খবর, বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার স্পিরিট, প্রায় ২ কোটি টাকার নকল মদ, বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের নকল সিল ও বারকোড। সব মিলিয়ে উদ্ধারকৃত সামগ্রীর বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। এই অভিযানে রায়গঞ্জ আবগারি দপ্তরের পাশাপাশি শিলিগুড়ির রিজিওনাল অফিসের দুই সদস্যের বিশেষ টিমও অংশ নেয়।
আবগারি দপ্তর জানিয়েছে, ধৃতদের নাম গঙ্গারাম মাহাতো, টিংকু সাহা, শংকর বিশ্বাস, নুরুল আলম, রাকেশ কুমার, মণীশ যাদব, সোনালাল যাদব, কমলেশ কুমার, শম্ভু সিং, বিনোদকুমার যাদব ও শংকরকুমার যাদব। এঁদের মধ্যে টুঙ্গিদিঘির বাসিন্দা গঙ্গারাম মাহাতো ও টিংকু সাহা দুই চালকলের মালিক। বাকিরা ওই দুটি চালকলের আড়ালে চলা নকল মদ তৈরির কারবারে কর্মচারী হিসেবে যুক্ত বলে অভিযোগ। তাঁদের কারও বাড়ি মুর্শিদাবাদ, কারও বাড়ি দিল্লি, কেউ করণদিঘি এলাকার, আবার কেউ বিহারের বাসিন্দা। এদিন ইসলামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন।
অভিযোগ, গঙ্গারাম মাহাতো চালকলের মালিক হওয়ার পাশাপাশি সার ব্যবসায়ীও। সেই সারের বস্তার আড়ালেই কারখানায় তৈরি ভেজাল মদ লুকিয়ে রাখা হত এবং পরে বড় ট্রাকে চাপিয়ে রাসায়নিক সার পরিবহণের নামে বিহারে পাচার করা হত। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই কারবার সম্পর্কে করণদিঘি থানার আইসি ও অন্য পুলিশ আধিকারিকরা জানলেও মাসে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা মাসোয়ারা নেওয়ার কারণে তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেননি। যদিও আইসি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের কাছে এরকম কোনও খবর ছিল না। খবর থাকলে নিশ্চয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হত।’
অভিযুক্তদের মধ্যে শংকর বিশ্বাস টুঙ্গিদিঘি ব্যবসায়ী সমিতির এক পদাধিকারীর জামাই। অন্যদিকে, গঙ্গারাম মাহাতো এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তাঁর রাজ্য ও জেলার একাধিক প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
আবগারি দপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত দেড় বছর ধরে চালকলের আড়ালে নকল বিলিতি মদ তৈরির কাজ চলছিল। তবে এই চক্রের সঙ্গে আরও বড় মাপের প্রভাবশালীরা জড়িত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ আধিকারিকরা।
উত্তর দিনাজপুরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ এক্সাইজ থেন্ডুপ ওয়াংরে ভুটিয়া বলেন, ‘করণদিঘি থানা এলাকায় তিনটি রাইস মিলে নকল ফরেন লিকার তৈরির অভিযোগ এসেছিল। তার মধ্যে দুটি মিল সিল করা হয়েছে। দুটি চালকলের মালিক সহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেক চালকল মালিকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’
সূত্রের খবর, অভিযান পরবর্তী তদন্তে ও ধৃতদের জেরা করে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আবগারি দপ্তর বিস্তারিত জানাতে নারাজ।