কামাখ্যাগুড়ি: আদি কামাখ্যাধামে বৃহস্পতিবার মন্দির সংলগ্ন মাঠ ও রাস্তায় মেলা বসেছে। প্রথম দিনই মেলার মাঠে ভিড় চোখে পড়ল। এই আদি কামাখ্যাধামের পুজোকে কেন্দ্র করে কামাখ্যাগুড়ি দেবেনবাবু চৌপথির বাসিন্দা ঋষিকেশ রাভা কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছেন। তিনি পেশায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাব-ইনস্পেকটর পদে দার্জিলিং জেলায় কর্মরত বলে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তিনি মন্দির চত্বরে পুজোর তদারকিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা হতেই তিনি জানালেন, তাঁদের পূর্বপুরুষেরা সকলেই এই আদি কামাখ্যাধামের পুজোর সঙ্গে জড়িত। তাঁর কথায়, ‘এই পুজো ছোটবেলা থেকেই আমাদের এলাকার সমস্ত স্তরের মানুষের আবেগ। বিশেষ অসুবিধা না থাকলে প্রত্যেক বছরই এই পুজোতে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরি।’
এদিন এই পুজোকে কেন্দ্র করে কোচবিহার জেলা থেকে প্রচুর মানুষ এসে মেলায় ভিড় জমিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশ জানিয়েছেন, এই মেলায় একসময় কোচবিহারের রাজপরিবারের তরফে অর্থবরাদ্দ করা হত। একইরকমভাবে হলদিবাড়ি, শিলিগুড়ি ও অসম থেকে মেলাতে অনেকে এসেছেন পুজো দিতে।
অসমের কোকরাঝাড় জেলা থেকে এসেছেন শীতল ব্রহ্ম। জানালেন, তিনি প্রতি বছরই অসমের কামাখ্যায় পুজো দিতে যান। তবে এবছর তিনি কামাখ্যাগুড়ির এই আদিধামে পুজো দিতে এসেছেন। কোচবিহার জেলার অজয় রায় এসেছেন তাঁর মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ায় মা কামাখ্যার কাছে পাঁঠাবলি দেওয়ার জন্য। শতাধিক ব্যক্তি তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ায় মা কামাখ্যার কাছে মানত নিবেদন করতে এসেছেন বলে তাঁর অনুমান।
কামাখ্যাগুড়ি এলাকার বাসিন্দা দেবাশিস ভট্টাচার্যের দাবি, ‘এই আদি কামাখ্যাধামকে সরকার চাইলেই বিশেষ পর্যটনকেন্দ্রের মর্যাদা দিতে পারে। এই আদি কামাখ্যাধামের ইতিহাসের সঙ্গে কোচবিহারের রাজপরিবারের যোগ রয়েছে।’ মেলাতে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ ভিড় জমাবেন বলে তাঁর অনুমান।
এদিন মন্দিরে সংলগ্ন মাঠে ও রাস্তায় মেলাকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ছোট-বড় ২০০ দোকান বসেছে। ভালো ব্যবসার ফলে এদিন ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি ফুটেছে। মেলায় মনিহারি দোকানদার পরেশ দাস বলেন, ‘বর্ষার মরশুমে ব্যবসায় মন্দা ছিল। তবে এই মেলায় এদিন ভালো বিক্রি হয়েছে।’
এই মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের উৎসাহ ও আবেগ জড়িয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কামাখ্যাগুড়ির বাসিন্দা তথা মন্দিরের এক কর্মকর্তা বীরেন বর্মন। তবে প্রশাসনের তরফে এই আদি কামাখ্যাধামকে অবহেলা করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তিনি বললেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার এই মন্দিরকে জনসমক্ষে অন্য মাত্রায় তুলে ধরার জন্য আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এই মন্দিরকে নিয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।’
আদি কামাখ্যাধাম সরকারি সহযোগিতা পেলে জেলায় অন্যতম ঐতিহ্যবাহী পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠবে বলেই স্থানীয় লোকসংস্কৃতির বিশিষ্ট গবেষক সুশীল রাভার ধারণা।