পিকাই দেবনাথ, কামাখ্যাগুড়ি: পেশায় ব্যবসায়ী, নেশায় সংগীতশিল্পী অলোক কুণ্ডু। একসময় সঙ্গীদের নিয়ে ব্যান্ড খুলেছিলেন। তাঁর গান প্রতিবেশী রাজ্যেও জনপ্রিয় হয়েছে। সেসব অবশ্য প্রায় আড়াই দশক আগেকার কথা। তখন তো আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার ‘প্রথা’ ছিল না। পরে যখন ফেসবুকে নিজের পেজ খুলেছেন, সেই পেজেরও প্রায় ৮২ হাজার ফলোয়ার! এখন তিনি একটি রেকর্ডিং স্টুডিও (Recording studio) বানিয়েছেন। কামাখ্যাগুড়িতে (Kamakhyaguri) তো আর রেকর্ডিং স্টুডিও খুব একটা সহজলভ্য নয়। স্থানীয় শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সেই স্টুডিওতে বিনামূল্যে রেকর্ড করার সুযোগ করে দেন অলোক।
ছেচল্লিশ বছর বয়সি অলোক এখনও সংগীতচর্চার পাশাপাশি খেলাধুলোরও চর্চা করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনও তাঁর গান যথেষ্ট ভাইরাল। তাঁর গানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনরা। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, দ্বিজেন্দ্রগীতি, লোকগীতি, আধুনিক যে কোনও গান সমানতালে গাইতে পারেন। শৈশবে তিনি গান শেখা শুরু করেন বাবা অচিন্ত্য কুণ্ডুর কাছে। তাঁর গান শেখার অনুপ্রেরণাও বাবা। এছাড়াও তাঁর গুরু হিসেবে তিনি আলিপুরদুয়ারের রবি ঘোষের কাছে কৃতজ্ঞ। ২০০০ সালে ‘প্রথম শুকতারা’ ব্যান্ড খুলেছিলেন তিনি। যা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত সহ অসমে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
অলোক বলছিলেন, ‘শিল্পকলার নির্দিষ্ট কোনও ভৌগোলিক সীমা থাকে না। ভালো কোনও শিল্প তৈরি করতে হলে একজন মানুষকে ভৌগোলিক সীমার বাইরে গিয়ে সবকিছু জানতে হবে, শেখার চেষ্টা করতে হবে।’
বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগই মোবাইলে আসক্ত। তারা সামাজিকতা ভুলতে বসেছে। এই পরিস্থিতি বদলের জন্য তিনি গানকে বাহন করেছেন অলোক। বর্তমান প্রজন্মকে তিনি বার্তা দেন, ‘মিউজিক শেখো, আনন্দে থাকো।’ গান, খেলাধুলো ও তাঁর জীবনের সামগ্রিক সাফল্যের পেছনে স্ত্রী মিঠু দত্তের অবদান অপরিসীম বলে জানান অলোক। মিঠু পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। সবসময় স্ত্রী তাঁকে ভরসা জোগান।
এতো গেল সংগীতচর্চার দিক। এদিকে, গত বছর আলিপুরদুয়ার জেলায় সুপার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ৪৬ বছর বয়সি এই ব্যবসায়ী কাম সংগীতশিল্পীই। এখনও নিয়মিত ক্রিকেট খেলেন। এই বয়সেও তাঁর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দেখে অনুপ্রাণিত হয় কামাখ্যাগুড়ির তরুণ প্রজন্ম। তরুণ প্রজন্মের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘নেশামুক্ত সমাজ গড়তে সবার আগে মাঠমুখী হওয়া একান্ত আবশ্যক।’
তাঁর সম্পর্কে কামাখ্যাগুড়ি মিশন হাইস্কুলের শিক্ষিকা সঞ্চয়িতা নাগ বলেন, ‘অলোক আমাদের কামাখ্যাগুড়ির তথা আলিপুরদুয়ারের গর্ব। তাঁর মতো সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব আলিপুরদুয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে।’