অনির্বাণ চত্রবর্তী, কালিয়াগঞ্জ: আবাসিক ছাত্রীদের স্নানে সিসিটিভি’র গোপন নজর কাণ্ডের জেরে ছাত্রীশূন্য হস্টেল। তবে, ফাঁকা হস্টেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা নিয়মিত কাজে আসছেন বলে দাবি করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা৷ ছাত্রীরা না থাকায় তেমন কোনও কাজ নেই ওই হস্টেল কর্মীদের। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দাবি, ‘অনেক ছাত্রী হস্টেলে আসতে চাইছে।’ প্রশ্ন উঠছে, তাহলে হস্টেল ছাত্রীশূন্য কেন? প্রধান শিক্ষিকার সাফাই, ‘পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়ার কথা মাথায় রেখে অধিকাংশ অভিভাবক ছাত্রীদের বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন৷ এখন ছাত্রীরা হস্টেলে ফিরতে চাইছে৷’
আবাসিক ছাত্রীদের অভিভাবকদের কথায় অবশ্য বিস্তর ফারাক। এক অভিভাবকের বক্তব্য, ‘এখনও মূল দুই অভিযুক্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি৷ মেয়ের জীবন আগে। ঘটনার পর মেয়ের স্কুলে যাওয়া বা হস্টেলে থাকা নিয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে। মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে এসেছি। ঘুমের মধ্যে আতঙ্কে কেঁপে উঠছে। মেয়ের মা দিনরাত কান্নাকাটি করছে। কী করব, বুঝতে পারছি না৷’ আর যাবে না স্কুলে বা হস্টেলে? জবাবে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী মাথা নীচু করে বলল, ‘না। ভয় লাগছে৷’
২ জুলাই আবাসিক কিছু ছাত্রীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ও সিসিটিভি ক্যামেরায় তাদের স্নানে পুরুষ কর্মীর নজর নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে কালিয়াগঞ্জের একটি স্কুল৷ প্রধান শিক্ষিকার ঘরের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখায় হস্টেলের ছাত্রীরা৷ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নানা অভিযোগ সামনে আনেন স্কুলের সহ শিক্ষিকারাও। প্রথমদিন প্রধান শিক্ষিকার তরফে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করায় দ্বিতীয় দিন ফের বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ আসে স্কুলে। পুলিশ স্নানের জায়গা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে দেয়। উপস্থিত হন স্থানীয় জয়েন্ট বিডিও সন্দীপন দে, এসআই শ্রীলা সাহা সহ কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। সহ শিক্ষিকা ও আবাসিক ছাত্রীদের অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে হস্টেলের হিসাবরক্ষক এবং অঙ্কন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কালিয়াগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষিকা।
কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোর্ট খুললে আবাসিক ছাত্রীদের অভিভাবকরা নিয়ে এলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দির জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।’ কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, ‘পুলিশ অবশ্যই দোষীদের গ্রেপ্তার করবে। তবে, অভিভাবকদের উচিত মেয়েদের হস্টেলে নিয়ে আসা।’