অসীম দত্ত, আলিপুরদুয়ার: তৃণমূলে (TMC) যোগ দিতে পারেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলা (John Barla)। সবকিছু ঠিক থাকলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলিপুরদুয়ার সফরেই তিনি তৃণমূলের পতাকা হাতে নেবেন। বারলার নিজের কথাতেও তেমনই ইঙ্গিত মিলছে।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট পাওয়া নিয়ে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল বারলার। টিকিট না পাওয়ায় তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি মনোজ টিগ্গাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনে দলের হয়ে প্রচারেও নামেননি জন। বরং ভোটের প্রচারপর্বে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মনোজের বিরোধিতাই করেছেন। এরপর থেকে বারলার সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের।
বারলা বলেন, ‘শাসকদলে যোগদান করতেও পারি। এতে অবাক হবার কিছু নেই। বর্তমানে স্ত্রী অসুস্থ থাকায় আমি দিল্লিতে রয়েছি। সেখান থেকে ফিরে পাকা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি বিজেপিকে ধোঁকা দিইনি। বিজেপি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে চা বলয়ের ভোটব্যাংকের জন্য বারলার ওপর ভরসা করেছিল বিজেপি। বারলা তার প্রতিদানও দিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ার আসনে জিতে। কিন্তু পরবর্তীতে সাংসদ বারলাকে নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপিতে এবং ভোটারদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছিল। তাই ২০২৪-এ আর তাঁকে প্রার্থী করার ঝুঁকি নেয়নি গেরুয়া শিবির।
জন অবশ্য বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি বিজেপিতে যোগদানের পর চা বলয়ে বিজেপির ঝান্ডা উড়েছে। তার আগে ডুয়ার্সে বিজেপির ঝান্ডা দেখা যায়নি। ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেই তা স্পষ্ট। মাদারিহাট বিধানসভা উপনির্বাচনে মনোজ আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন যে তিনি একাই জিতিয়ে দেখাবেন। আমিও পালটা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। ফলাফলে দেখা গেল মনোজ নিজের বুথেই জিততে পারেননি। মনোজের চ্যালেঞ্জে বাধ্য হয়ে ওকে হারাতে আমি ভোটের ময়দানে ছিলাম। ফলাফল হাতেনাতে।’
বিজেপি ছাড়ার জল্পনার আগুন উসকে দিয়ে বারলা বলেন, ‘এছাড়াও চা বাগানের জন্য বিজেপি কিছু করেনি। কেন্দ্রীয় কোনও প্রকল্প নেই। ওই দলের সঙ্গে থেকে কী হবে? রাজ্য সরকারের অনেক প্রকল্প রয়েছে, যা চা বলয়ের মানুষের উপকারে আসবে। এখন যাঁরা বিজেপি করছেন তাঁরা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি যে দলে যাব তাঁরাও সেদিকে যাবেন।’
মাদারিহাট বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ের সুবাদে প্রায় ১ বছর ১ মাস বাদে আলিপুরদুয়ার জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২১ তারিখ বিকেলে তিনি মালদা থেকে আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের মালঙ্গিতে আসছেন। ওইদিন তিনি মালঙ্গি বনবাংলোয় রাত কাটাবেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বারলা ২১ তারিখ রাতেই মালঙ্গি বনবাংলোয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী ২৩ তারিখ কালচিনির সুভাষিণী চা বাগানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা শেষে শাসকদলে যোগ দিতে পারেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
বারলা বিজেপি ছাড়লে চা বলয়ে বিজেপির সংগঠনে কতটা প্রভাব পড়বে তা সময়ই বলবে। তবে তিনি রাজ্যের শাসকদেল যোগদান করলে জেলার ৬৪টি চা বাগানেই তৃণমূলের সংগঠন মজবুত হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপির সাংসদ মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘কেউ দল ছাড়তে চাইলে তাঁকে আটকে রাখা যাবে না। তবে কারও জন্য সংগঠন দুর্বল হবে, তা কোনওদিনই সম্ভব নয়। আমরা বিজেপির কর্মী, এটাই আমাদের পরিচয়।’
বারলার যোগদান প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিকবড়াইক বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমি কিছু জানি না।’