অসীম দত্ত, আলিপুরদুয়ার: এ যেন বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। শিবচতুর্দশী উপলক্ষ্যে জয়ন্তী মহাকালে (Jayanti Mahakal Temple) পুণ্যার্থীদের মাদকদ্রব্য সেবন রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) পুলিশ ও প্রশাসন। রবিবার থেকেই শুরু হয়েছে কড়া নাকা চেকিং। কিন্তু যত কড়াকড়ি সবই তো এদেশের মাটিতে। সীমান্ত পেরিয়ে একবার প্রতিবেশী দেশ ভুটানে ঢুকতে পারলেই হল। সেখানে যেন মদের ফোয়ারা ছুটেছে এই শিবরাত্রিকে কেন্দ্র করে।
জয়ন্তীর মহাকালধামে যেতে গেলে ইন্দো-ভুটান সীমান্ত পেরিয়ে আরও প্রায় ৪ কিলোমিটার যেতে হয় পুণ্যার্থীদের। সেই রাস্তা তো ভুটান সরকারের অধীনে। এপারের প্রশাসনের মতো কোনও কড়াকড়ির চিহ্ন কিন্তু দেখা গেল না ভুটানের মাটিতে। মঙ্গলবার থেকেই তো মহাকালধামমুখী পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়েছে। আর তাঁরা ভুটানে প্রবেশ করলেই সুযোগ পাচ্ছেন অবাধে নেশা করার। সারিবদ্ধ মদের দোকান। ভুটান বিয়ার তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে রয়েছে একটু কম দামের ভুটান রামও। ভুটানের দামি মদের তালিকায় থাকা ব্র্যান্ডগুলিও সেখানে সহজলভ্য। শিবভক্তদের কাছে সেইসব মদের চাহিদা তুঙ্গে। আসক্তরা অবশ্য সেসবের পরোয়া করছেন না। একটু খোঁজ করতেই জানা গেল, ভুটানি মদের পাশাপাশি পরিচিত বিদেশি ব্র্যান্ডও খুল্লম খুল্লা বিক্রি হচ্ছে।
কেবল মদ নয়, খাবারদাবারেরও কমতি নেই। যে দোকানগুলিতে নানারকম মদ মিলছে, সেখানেই আবার অমলেট থেকে শুরু করে চাউমিন, মোমো, ঘুগনি সহ হরেকরকম ফাস্ট ফুড পাওয়া যাচ্ছে। সারিবদ্ধ ওই সমস্ত দোকানে বেশিরভাগ দোকানেই কমবয়সি মহিলা দোকানদার। ভুটান পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে এসেছেন তাঁরা। আপাতত বেশ কয়েকদিন তাঁদের আস্তানা মহাকালধামের পথেই। মদ্যপানের টানে ওই মহিলা পরিচালিত দোকানগুলোতেই কমবয়সি শিবভক্তদের একাংশের ভিড় উপচে পড়ছে।
তবে সেই মদ্যপান করতে গেলে দাম চোকাতে হচ্ছে নির্দিষ্ট দামের থেকেও তিন-চারগুণ বেশি। ভুটানে একটা ভুটানি বিয়ারের দাম ৬০-৬৫ টাকা। সেই বিয়ার শিবভক্তদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। যে মদের দাম অন্য জায়গায় ১২০-১৫০ টাকা বোতল, এখানে সেই বোতল প্রতি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভুটান পাহাড়ের কোলে অস্থায়ী ওই সমস্ত মদের দোকানে গাঁজা সহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যও বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, ভারতের অংশে মাদকদ্রব্য রুখতে কড়া নজরদারি জারি রেখেছে বন দপ্তর, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। গত রবিবার থেকেই জয়ন্তী প্রবেশে রাজাভাতখাওয়া গেটে নাকা চেকিং শুরু করেছে বন দপ্তর, পুলিশ। মঙ্গলবার পর্যন্ত গত দু’দিনে রাজাভাতখাওয়া গেটে মদ, গাঁজা মিলিয়ে শিবভক্তদের থেকে লক্ষাধিক টাকার নেশার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বক্সা টাইগার রিজার্ভের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর দেবাশিস শর্মা বলেন, ‘আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত আমাদের নজরদারি চলবে। ভারতের সীমানা পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসন রয়েছে।’