শান্ত বর্মন, জটেশ্বর: ভোট আসে, ভোট যায়। সাধারণ মানুষকে ভোটের সময় যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তা ভোট ফুরোলেই শেষ। আর সেই ‘ঐতিহ্য’ বহন করে আসছে ফালাকাটা ব্লকের জটেশ্বরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। জটেশ্বরের (Jateswar) এই একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ওপর এলাকার ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ২ লক্ষ বাসিন্দা নির্ভর করেন। কিন্তু সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থায়ী চিকিৎসক নেই। বহু প্রতিশ্রুতির পরেও শয্যা চালু হয়নি। শুধু নির্দিষ্ট সময়ে খোলা থাকে বহির্বিভাগ। দুর্ঘটনা বা জরুরি সমস্যায় রোগীকে ১২ কিলোমিটার দূরের ফালাকাটা ও বীরপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা কমল মণ্ডল বলেন, ‘একদিন মোটর সাইকেল চালাতে গিয়ে আহত হয়েছিলাম। সন্ধ্যার আগে জটেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখি দরজা তালাবন্ধ। বাধ্য হয়ে অন্যত্র চিকিৎসা করাতে হয়েছে।’
২০০৮ সালে জটেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০ শয্যার পরিষেবা চালু হয়েছিল। প্রসূতি ও সাধারণ বিভাগে দিন-রাত পরিষেবা মিলত জটেশ্বরে। কিন্তু ধীরে ধীরে জটেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।
পরে শয্যা সহ স্থায়ী চিকিৎসক দিয়ে পরিষেবা চালুর কথা একাধিকবার শোনা গেলেও তা আর হয়নি। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের আগে বন্ধ হওয়া ফালাকাটা গ্রামীণ হাসপাতালের পরিষেবা জটেশ্বরে চালু করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতারা। তবে সে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এবিষয়ে ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষচন্দ্র রায়ের বক্তব্য, ‘বিষয়টি নিয়ে জেলা স্তরে যোগাযোগ করে দেখা হবে।’
ফালাকাটার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অতনু ভট্টাচার্যের দাবি, ‘জটেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভবন না থাকায় শয্যা চালু করা যাচ্ছে না। ভবন তৈরির জন্য পূর্ত দপ্তরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভবন তৈরি হলে ইন্ডোর, আউটডোর দুই পরিষেবাই চালু হবে।’
বর্তমানে সামান্য দুর্ঘটনা ঘটলেই রোগীকে ফালাকাটা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল বা বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে গ্রামীণ হাসপাতালে রূপান্তরিত করলে দলগাঁও, জটেশ্বর-১, ২, ধনীরামপুর-১, ২ এবং গুয়াবরনগর উত্তরাংশের মানুষ পরিষেবা পাবেন। মালসাগাঁওয়ের বাসিন্দা জীতেন রায়ের অভিযোগ, ‘বাড়ির কাছে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে কী লাভ, যদি জরুরি সময় চিকিৎসা না পাওয়া যায়?’
ফালাকাটার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ক্ষিতিশচন্দ্র রায় জানিয়েছেন, তাদের সময়ে শয্যা ও স্থায়ী চিকিৎসক উভয়ই ছিল। বিষয়টি দেখা উচিত বলেও তিনি দাবি করেন। আর বিজেপির সাংসদ মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘দু’-তিনদিনের মধ্যে জটেশ্বর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করব। খতিয়ে দেখে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেব।’