বার্মিংহামঃ কেউ কফি শপে সময় কাটালেন। কেউ টিম হোটেলেই বিশ্রাম নিলেন। আবার কেউ কেউ বার্মিংহামের রাস্তায় ঘুরে বেড়ালেন।
লিডস থেকে গতকালই বার্মিংহাম পৌঁছে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। আজ পুরো দিনই বিশ্রাম ছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদের। হেডিংলে টেস্টে হারের ধাক্কা সামলে সামনে তাকানোর লক্ষ্যে আজ টিম ইন্ডিয়ার ছিল ‘ফ্রি’ ডে। হঠাৎ পাওয়া সেই ছুটির দিনটাকে টিম ইন্ডিয়ার সদস্যরা দারুণভাবে উপভোগ করেছেন। আর সেই উপভোগ করার নেপথ্য কারণ হল, মানসিক চাপ কাটানো। হেডিংলে টেস্টে যেভাবে ফিল্ডিং ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং ডুবিয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে, সঙ্গে জসপ্রীত বুমরাহর উপর প্রবল নির্ভরতার বিষয়টা সামনে এসেছে। তারপর ২ জুলাই থেকে এজবাস্টনে শুরু হতে চলা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ফের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে শুভমান গিলের ভারতকে।
এজবাস্টনের মাঠে আগামীকাল থেকে অনুশীলন শুরু করছে টিম ইন্ডিয়া। কাল ও পরশু, দুই দিনই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন ভারতীয় দলের। সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ শুভমানদের অনুশীলনে। টিম ইন্ডিয়ার তরফে আজ রাতেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিষয়টি। হেডিংলে টেস্টের আগেও এমন ক্লোজডোর অনুশীলন করেছিল ভারতীয় দল। ফের সেই পথেই হাঁটতে চলেছে টিম ইন্ডিয়া। শুধু তাই নয়, ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ বাড়িয়ে আজ জানা গিয়েছে, এজবাস্টন টেস্টের প্রথম একাদশে হয়তো থাকবেন না বুমরাহ। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কারণে তাঁকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। বুমরাহ শেষ পর্যন্ত এজবাস্টন টেস্টে না খেললে ভারতীয় বোলিংকে কে নেতৃত্ব দেবেন, কে তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করবেন-চলছে জল্পনা। মনে করা হচ্ছে, এজবাস্টন টেস্টে খেলতে পারেন অর্শদীপ সিং। এসবের মধ্যেই হর্ষিত রানা লিডস থেকে ভারতীয় দলের সঙ্গে বার্মিংহামে পৌঁছাননি। ভারতীয় দলের অন্দরের খবর, কোচ গৌতম গম্ভীরের অতি প্রিয় হর্ষিতকে স্কোয়াড থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন? তার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি টিম ইন্ডিয়ার তরফে।
চলতি সিরিজে আপাতত ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে শুভমানের ভারত। ২ জুলাই থেকে শুরু সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। বার্মিংহামের এজবাস্টনের মাঠে হবে দ্বিতীয় টেস্ট। এই মাঠ ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ‘অভিশাপ’। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান বলছে, অতীতে কখনও এজবাস্টনের মাঠে টেস্ট জিততে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। ৫৮ বছর আগে এজবাস্টনের মাঠে প্রথম টেস্ট খেলেছিল ভারত। মাঝে দীর্ঘসময় পার। আর দীর্ঘ এই সময়ে মোট আটটি টেস্ট এজবাস্টনে খেলেছে ভারত। হেরেছি সাতটি ম্যাচে। ড্র একটি টেস্টে। জয় আজও অধরা। এবার কি ছবিটা বদলাতে পারে? জবাব কারও জানা নেই। হেডিংলেতে লজ্জার হারের পর শুভমানের ভারতকে নিয়ে কেউই বাজি ধরতে চাইছেন না। সঙ্গে দলের কম্বিনেশনে বদল আনার কথাও বলে চলেছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। গম্ভীর-শুভমানরা কি সেসব শুনতে পাচ্ছেন? আদৌ কি টিম ইন্ডিয়া এজবাস্টন অভিশাপ কাটিয়ে সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন?
জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে। আর এই জল্পনার মধ্যেই সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে চলতি ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে মুখ খুলেছেন লোকেশ রাহুল। ভারতীয় ওপেনার হেডিংলে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভালো শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান করেছেন। এহেন রাহুল বার্মিংহামে পৌঁছানোর পর আজ বলেছেন, ‘পরিকল্পনা করেই আগে ইংল্যান্ডে হাজির হয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল সঠিক প্রস্তুতির। প্রথম টেস্টের পর বলতে পারি, প্রস্তুতির দিক থেকে সঠিক জায়গায় রয়েছি আমি।’ শেষ আইপিএলের সময় বাবা হয়েছেন রাহুল। ফলে তাঁর জন্য পরিবার ও সন্তানকে দেশে ফেলে রেখে দীর্ঘ বিলেত সফরে হাজির হওয়াটা সহজ ছিল না। কিন্তু নিজের ক্রিকেটীয় দর্শনের দিক থেকে পজিটিভ অবস্থান লোকেশের। তাঁর কথায়, ‘আমার কাছে দেশ সবকিছুর আগে। হ্যাঁ, পরিবারেরও আগে।’
এহেন রাহুল বাকি সিরিজে শুভমানের ভারতকে কতটা ভরসা দিতে পারেন, সেটাই এখন দেখার।