পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: নদিয়ার মাজদিয়ার মতো কাফ সিরাপ মজুতের কোনও বাংকার নেই ঠিকই, কিন্তু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া সিডেটিভ ড্রাগস বিক্রির রমরমায় জলপাইগুড়িতে (Jalpaiguri) নেশাগ্রস্তদের সংখ্যা বাড়ছে। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় ওষুধের দোকানগুলিকে সতর্ক করল জেলা প্রশাসন। অনুমতি ছাড়া চলা রিহ্যাব সেন্টারগুলিকেও সতর্ক করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার জেলা শাসকের কনফারেন্স রুমে নারকোটিক সংক্রান্ত বৈঠকে জেলা শাসক শামা পারভিন ও পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত সতর্ক করার পাশাপাশি কিছু নির্দেশ দিয়েছেন।
ভিনরাজ্য থেকে তো ঢুকছেই, স্থানীয় কিছু ওষুধের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে সিডেটিভ ড্রাগস। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এধরনের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বলে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে। পাশাপাশি, লাইসেন্স ছাড়া মাদকাসক্তদের নিয়ে জেলায় বেশ কয়েকটি রিহ্যাবিলিটেশন কেন্দ্র চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন কিছু বিষয় এদিন জেলা শাসকের কার্যালয়ে হওয়া বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে। জানা গিয়েছে, সিডেটিভ ড্রাগস মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি করা পাইকারি ও খুচরো ওষুধের দোকানগুলিকে চিঠি পাঠাচ্ছে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ। বিনা লাইসেন্সে চলা রিহ্যাব কেন্দ্রগুলিকে দ্রুত লাইসেন্স করে নেওয়ার নির্দেশ দেবে জেলা প্রশাসন। যে কেন্দ্রগুলি লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করেনি, তাদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে। জেলা শাসক শামা পারভিন বলেন, ‘ড্রাগ কন্ট্রোল আইনভঙ্গকারী ওষুধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রিহ্যাব কেন্দ্রগুলিকেও লাইসেন্স করা ও নবীকরণের জন্য নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। মাদকবিরোধী প্রচার জেলাজুড়েই করা হচ্ছে।’ লাইসেন্স ছাড়া যে কোনও কেন্দ্র চলতে দেওয়া হবে না, তা এদিন স্পষ্ট করে দেন জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত।
গত মাসে ওদলাবাড়িতে একটি বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রচুর পরিমাণ নেশার ওষুধ, জলপাইগুড়ি শহরের বুকে টোটো থেকে গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৫টি নারকোটিক মামলা করা হয়েছে পুলিশের তরফে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি বাস তো বটেই, উত্তরবঙ্গ রাস্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসের মাধ্যমেও জেলায় ঢুকছে সিডেটিভ ড্রাগস। সাধারণ যাত্রী সেজে অনেক পাচারকারী এই কাজ করছে। তাই বাসচালক এবং বাসে থাকা কর্মীদের সতর্ক করা হচ্ছে বলেও জানান জেলা পুলিশ সুপার। জলপাইগুড়ি জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সভাপতি রণজিৎ মিশ্র বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক দিক থেকে আমরা ওষুধের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ব্যবসায়ীকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছি।’ ভারত-ভুটান ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এসএসবি এবং বিএসএফের সঙ্গে জেলা প্রশাসন যোগাযোগ রাখছে বলেও জানা গিয়েছে।