Jalpaiguri | সম্মুখসমরে রাম ও হনুমান, সৌজন্যে রাজনীতি

Jalpaiguri | সম্মুখসমরে রাম ও হনুমান, সৌজন্যে রাজনীতি

ব্লগ/BLOG
Spread the love


সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি : ত্রেতাযুগে রাক্ষসরাজ রাবণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা দুজনে ছিলেন একপক্ষে। প্রভু এবং ভক্ত হিসেবে তাঁরা আজও স্মরণীয়। সময়ের ফেরে ঘোর কলিতে আজ দুজনে লড়াইয়ের ময়দানে মুখোমুখি। ‘রামভক্ত হনুমান’ মিথকে পালটে ফেলার পিছনে বঙ্গ রাজনীতির দুই পক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি।

মুখোমুখি কোনও বিরোধ না থাকলেও রামনবমী এবং হমুমান জয়ন্তী পালন নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ছে ধূপগুড়িতে। পদ্মের রাম রাজনীতি ঠেকাতে গত কয়েক বছরে ধূপগুড়ির তৃণমূল নেতারা হনুমানের স্মরণ নিয়েছেন। জমজমাট সেই লড়াইয়ে কিছুটা গোল বেধেছে তৃণমূলেরই একাংশ রামপুজোয় শামিল হওয়ায়। রামের পালটা হিসেবে হনুমানকে আঁকড়ে ধরা তৃণমূল নেতাদের কুনজরে পড়েছেন দলেরই রামভক্ত যুব নেতারা।

প্রায় এক দশক আগে শহরের হাসপাতালপাড়ায় বিজেপি কাউন্সিলার কৃষ্ণদেব রায়ের বাড়িতে রামনবমীর পুজো শুরু হয়। সেই থেকে ‘শ্রীরাম নবমী উদযাপন সমিতি’র ব্যানারে আরএসএস এবং বিশ্বহিন্দু পরিষদের সদস্যদের সক্রিয় সহায়তায় প্রতিবছরই আকারে বেড়েছে রামনবমীর আয়োজন। প্রচার এবং আয়োজনের মাত্রা বাড়াতে ২০২২ সালে সেই পুজোকে নিয়ে আসা হয় শহরের প্রাণকেন্দ্র মিলনি ময়দানে৷ এবারও সেখানে সাড়ম্বরে রামনবমী আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আয়োজকদের প্রথম সারিতে শ’খানেক উঠতি তরুণ। বিশাল শোভাযাত্রার পাশাপাশি পুজো, প্রসাদ বিলির প্রস্তুতি চলছে।

এই উপলক্ষ্যে বিশেষ ধর্মীয় পতাকা ব্যানারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে শহর। বুধবার গভীর রাতে শহরের গণেশ মোড় এলাকায় এমনই একটি ব্যানার ছেঁড়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে তা নিয়ে জল বেশিদূর গড়ায়নি।

এতদিন শহরে এই একটিই রামনবমীর পুজো আয়োজন হলেও এবার ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছে ‘সম্প্রীতি সংঘ’ নামে সংস্থার ব্যানারে। এই সংস্থার অন্যতম কর্মকর্তা তথা ধূপগুড়ি টাউন ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সহ সভাপতি শুভ দে সরকার বলেন, ‘হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলেই রামনবমীর পুজোয় শামিল হবেন বলেই সম্প্রীতি সংঘ নাম দিয়েছি আমরা। বিভাজনের ঊর্ধ্বে রামনবমী হোক মিলনমেলা।’

তবে যে নেতারা এই পুজোয় শামিল হবেন তাঁদের নিয়ে ইতিমধ্যেই ভ্রূ কুঁচকেছেন তৃণমূল নেতাদের অনেকেই৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, আগে থেকেই শহরে এক জায়গায় বিজেপির লোকজন বড় আকারে রামনবমী আয়োজন করে যেখানে আমরা উপস্থিত হই না। তাছাড়া আকারে আয়োজনে আড়ম্বরে ওই রামনবমীকে টেক্কা দেওয়া না গেলে সেটা মুখ পোড়ার শামিল হবে। ঘোষণার আগে দলীয় স্তরে আলোচনা হলে ভালো হত।

৬ এপ্রিল রামনবমী বিজেপির জন্যে ছেড়ে ১২ এপ্রিল হনুমানকে আঁকড়ে ধরতেই মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। এবারে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষ্যে পুজো এবং শোভাযাত্রার পাশাপাশি হাজার দশেক মানুষকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন আয়োজকরা। শহরের গয়েরকাটা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হনুমান মন্দিরেই হবে সাড়ম্বরে পুজো৷ উৎসাহের বশে হনুমান জয়ন্তী আয়োজকরা রামনবমীর ব্যানারের ওপর হনুমান জয়ন্তীর ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়ায় শুরু হয়েছে নতুন আরেক বিতর্ক। এনিয়ে হনুমান জয়ন্তী আয়োজক তৃণমূল নেতাদের টার্গেট করে জলপাইগুড়ি জেলা রামনবমী উদযাপন সমিতির আহ্বায়ক তথা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জেলা সহ সভাপতি কৃষ্ণেন্দু গুহ বলেন, ‘২০১৭ সালে যাঁরা শ্রীরামকে বহিরাগত বলেছিলেন আজ তাঁদের রামভক্ত হনুমানজির আশ্রয় নিতে হয়েছে। শুনলাম সেই সমালোচকদের একাংশ এবারে ধূপগুড়িতে রাম স্মরণে উদ্যোগী হয়েছেন। বাকিরাও আগামীদিনে আসবেন এই পথেই।

কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, গতবার জেলায় ১১ জায়গায় রামনবমীর আয়োজন হয়েছিল এবারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮টিতে। জেলায় রামচন্দ্রের এক ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ঠেকাতে তাঁর ভক্ত হনুমান কতটা সহায়ক হবেন তা নিয়ে অবশ্য স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি তৃণমূল নেতারা। ধূপগুড়ি হনুমান জয়ন্তী উদযাপন কমিটির অন্যতম আয়োজক তথা জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক রাজেশকুমার সিং বলেন, ‘হনুমান জয়ন্তীর এই বিশেষ পুজো অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে হয়ে চলেছে। আমরা এনিয়ে কোনও লড়াই বা রাজনীতি চাইছি না৷ আশা করব রামনবমীকে কেউ সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *