অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে দশটা। জলপাইগুড়ি শহর (Jalpaiguri) সংলগ্ন দেবনগর নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে একে একে আসতে শুরু করেছে পড়ুয়ারা। কিন্তু তখনও খোলেনি স্কুল। বেশ অনেকক্ষণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখা না মেলায় স্কুলের সামনের মাঠে খেলাধুলোও করে বাচ্চারা। এরপর সাড়ে এগারোটার সময় এক শিক্ষক আসার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু তখনও পর্যন্ত আরও একজন শিক্ষিকার দেখা মেলেনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে কোনওরকমে দরজার তালা খুলে দিয়ে বাচ্চাদের ক্লাস নেওয়া শুরু হলেও এমন পরিস্থিতিতে হয়নি সকালের প্রার্থনাও।
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পশ্চিম মণ্ডলের নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়টিতে প্রাথমিক স্তরের পঠনপাঠন হয়। প্রধান শিক্ষক সহ মোট ৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। শুক্রবার এই বিদ্যালয়ে এগারোটা নাগাদ গিয়ে দেখা যায় গেটে তালা ঝুলছে। ১৫-১৬ জন ছাত্রছাত্রীর কেউ মাঠে খেলছে, কেউ আবার গাছের নীচে বসে শিক্ষকদের অপেক্ষা করছে। এরই মাঝে সাড়ে এগারোটার কিছুটা সময় পর প্রধান শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে আসেন। কারণ হিসেবে প্রধান শিক্ষক কিংশুক বসু বলেন, ‘কাউন্সিলে কিছু কাজের জন্য আমাকে ডাকা হয়েছিল। ওখান কাজ সেরে আসার পথে ৭৩ মোড় এলাকায় পথ অবরোধের জন্য দেরি হয়েছে। অবরোধকারীরা আসতে দিচ্ছিলেন না। অন্যদিন এমন হয় না।’
কিন্তু বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকা কেউই কেন আসেননি সময়মতো? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি পথ অবরোধের কথাই তুলে ধরেন। প্রধান শিক্ষক সহ বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে দেরি করে আসায় প্রেয়ার লাইনও হয়নি। বিষয়টি কি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে জানাবেন? প্রশ্ন করা হলে প্রধান শিক্ষকের উত্তর, ‘প্রাথমিক বিভাগের জেলা পরিদর্শক যদি জানতে চান তবে নিশ্চয়ই জানাব।’
অন্যদিকে প্রাথমিক বিভাগের জেলা পরিদর্শক শ্যামলচন্দ্র রায় বলেন, ‘স্কুলে সময়মতোই আসতে হবে। কেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা দেরি করে এলেন তা নিশ্চয়ই জানতে চাওয়া হবে। তবে, এধরনের অনিয়মের খবর যদি আসে তবে প্রয়োজনে সেই শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শোকজ করা হবে।’
উল্লেখ্য, পাশেই রয়েছে দেবনগর সতীশ লাহিড়ি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেখান থেকে প্রথম ঘণ্টার আওয়াজ কানে এলেও একই চত্বরে থাকা দেবনগর নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে তখন সবেমাত্র তালা খোলা হয়। এনিয়েই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। আর যদি পথ অবরোধের জন্যই দেরি হয় তাহলে সাড়ে এগারোটা বাজবে কেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।
আরও প্রশ্ন উঠছে, প্রধান শিক্ষক সংসদে কাজে ব্যস্ত থাকলেও অন্যরা এগারোটার আগে কেন স্কুলে এলেন না। নিয়ম অনুয়ায়ী দশটা পঞ্চাশের মধ্যে প্রেয়ার লাইন করে এগারোটা থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা৷ কিন্তু শুক্রবার কিছুই হয়নি। তবে স্কুল খুলতেই যে যার ক্লাসে চলে যান এবং পড়ানো শুরু করেন।